Thursday, March 24, 2011

ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন

বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে
বাংলাদেশের দামাল ছেলে,
বুক ভরা সব আশা নিয়ে
বিশ্ব আজ মাতিয়ে খেলে।
বাঙালী সাহসী জাতি
ভয় করে না কিছুতে,
বীরদর্পে এগিয়ে চলে
জানে না সে পিছুতে।
ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন সবার
হয় না যেন বাড়াবাড়ি,
আশাকুকটুকু থাকুক যেন
সামর্থটুকু দেখাতে পারি।

Wednesday, March 23, 2011

সৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ

বিবর্ণ পৃথিবীতে
মাটি চষা চাষাদের অতৃপ্ত তৃষ্ণায়
ঢেলে দিয়ে একমুঠো সুখ
উত্তরী হাওয়ার আহবানে,
জড়া আর মৃত্যুর ক্লান্তি ছুঁয়ে
বেজে উঠে বোশেখী ডাক,
এর-ই মাঝে ফিরে আসে
পহেলা বৈশাখ।
ফাগুনের ভেজা কাঁপন ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসে নিষিদ্ধ রাত
কল্প কথার গল্প শেষে
তবুও তা নতুন প্রভাত।

ফিরে যাক ফিরে আসুক
তবুও নতুন থাক,
সৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ।

ভ্রূ চ্যুতি

বাড়ি থেকে স্কুলটা বেশ দূরে। তাই সুজনকে স্কুলে হোস্টেলে দিয়ে দেওয়া হলো। সুজন চলে গেছে, তাই বলে কি পদ্ম বসে থাকবে! তা তো হতেই পারে না। তাই পদ্মও তার বাবা-মার বাধা সত্ত্বেও ভর্তি হয়ে গেল। বাড়ি থেকে হোস্টেলে বেশ মজাই কাটতে লাগল দু’জনের। তবে যখনই পড়ার ব্যাপারটা আসে তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিতাই স্যারের জ্বালায় পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করাই মুশকিল। রাতের বেলা পড়া শেষ না করে কিছুতেই ঘুমানো যাবে না ,তার ঊপর আবার রাত শেষ না হতেই ঘুম থেকে ডেকে তোলে। এতে ওদের একেবারে অতিষ্ট হওয়ার অবস্থা। এত পড়া ওরা জীবনে আর কখন পড়েছে বলে মনে হয় না। পড়িয়ে ওদের পন্ডিত বানানোর অবস্থা। তাদেরকে হোস্টেলে দিয়ে তাদের বাবা-মা এক রকম শান্তিতেই আছেন বলতে হয়।

স্কুল হোস্টেলে থাকার যে কম মজা তা কিন্তু নয়। হোস্টেলে অবস্থান করা ছেলেদের স্কুলে আলাদা একটা দাপট থাকে। যে কোন ব্যাপারে তাদেরই আগে ডাকা হয়। এ নিয়ে পদ্মের গর্বের শেষ নেই। ‘ফাহিম’ ফাস্ট বয় হলেও স্কুলের কোন ব্যাপারে তার ডাক আসে না। এ নিয়ে তার এক রকম রাগ আছে বলতে হয়। পদ্ম আর সুজন এমন ভাব নিয়ে থাকে যেন পুরো ক্লাসের নেতা তারাই। অবশ্য স্কুলের হোস্টেলে থাকার সুবাদে ক্লাসের ক্যাপ্টিনসিটা তারাই পেয়েছে। সুতরাং ক্লাসের কোন ছেলে ওদের বিরুদ্ধে গেলেই হয়; কত ধানে কত চাল ওরা ভালভাবেই তা বুঝিয়ে দেয়। স্যারের কাছে মিথ্যা বিচার দিয়ে তারপর মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করে একেবারে নাজেহাল অবস্থা করে দেয়। তাই সব ছেলে তাদের অনুগত হয়ে থাকার চেষ্টা করে। ক্লাসের ছেলেদের প্রতি ওদের বেশ মায়াও আছে। ওদের সাথে বেশি বাড়াবাড়ি না করলে ওরা এমনিতেই কাউকে মার খাওয়ায় না। এমনকি হাজারো দস্যিপনা করলেও। তাই তাদের এ ঐক্যের কথা পুরো স্কুলে ছড়িয়ে গেল। তাছাড়া পদ্মর অবাধ্য হয়ে ক্লাসে কেউ কথাও বলত না। ফলে ক্যাপ্টিনসিতে তাদের নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। আর তাদের ক্লাসের সুনাম তো পুরো স্কুলেই আছে। সেরা ক্যাপ্টিন হিসেবে তাদের মনোনীত করা হলো। ফলে স্কুলে তাদের নিয়ে অন্য রকম এক অবস্থা।

পদ্মদের উপরের ক্লাসে পড়ে সিরু ভাই। সারা স্কুলে ওনার দাপট আছে। তার এতদিনে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার কথা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো পড়ছেন ক্লাস এইটে, পদ্মদের দুই ক্লাস উপরে। এই স্কুলে এমনো অনেক টিচার আছে যাদের বয়স কিনা সিরু ভাইয়ের সমান। বিভিন্ন ক্লাসে ফেল করে তার এ অবস্থা। সিরু ভাই স্কুল হোস্টেলে পদ্মদের পাশের রুমে থাকে। ওনার মত এ রকম ম্মার্ট ছেলে এ স্কুলে আর একজনও হয়ত নেই। চেহারা এত শ্রী না হলেও চুলের কাটিং, মুখের হাবভাব দেখে মনে হয় যেন ধনীর দুলাল। আসলে তার বাবা একজন মুছি। তাকে দেখলে কেউ তা জীবনে বিশ্বাসও করবে না। পড়ালেখার ব্যাপারে একেবারে হাবা- গঙ্গারাম। একটা জিনিস একশোবার পড়েও মনে রাখতে পারে না। তবে দুষ্টামির মাধ্যমে যা কিছু শিখে তা মোটামুটি মনে রাখতে পারে। এই যেমন সে পীথাগোরাসের সূত্রটা শিখেছে এভাবে, (স্যারের ছেলে) ২=(স্যার)২+(স্যারের বউ)২।

পদ্মর সাথে অবশ্য সিরু ভাইয়ের সম্পর্ক অত ভাল ছিল না। তার কারণ আছে। স্কুলের ড্রেসের জন্য পদ্মর বাবা একটা নতুন সাদা শার্ট কিনে দিয়েছিল। পদ্ম নিজের রুমে শার্টটা রেখে কি কাজে যেন বাইরে গিয়েছিল। এ সময় সিরু ভাই কবিতা মুখস্ত করার সুযোগ পেয়ে পদ্মের শার্টে নজরুলের অভিযান কবিতাটা লিখে ফেলল। তারপর তো পদ্ম সে শার্ট পরে ঘুরে বেড়াতে লাগল। সেদিন ওকে যেই দেখল সেই এটা পড়তে লাগল। এভাবে সিরু ভাইয়েরও কবিতা মুখস্ত হয়ে গেল। পদ্ম সবার কবিতা পড়ার বাতিক দেখে অবাক হয়ে গেল। সুজন এসে পদ্মর শার্টের পিছনের লেখাটা দেখিয়ে দিল। তারপর তো সে রাগে ফোস ফোস করতে লাগল। সোজা গিয়ে নালিশ দিল নিতাই স্যারের কাছে। কিন্তু ফল হলো শূন্য। স্যার বললেন, ও হাবা- গঙ্গারাম মানুষ তোরা সাহায্য করলেই তো ঐ গবেটটা কিছু শিখতে পারবে। সেদিন থেকে সিরু ভাইয়ের উপর তার রাগ চরমে উঠে।

তাছাড়া উনি এমন ভাব নিয়ে চলেন যেন এই স্কুলের হেড মাষ্টার। কোন কিছুর দরকার হলে পদ্ম কিংবা মানুষকে পাঠিয়ে দেবে দোকানে। কি এমন লাট বাহাদুর যে, সিগেরেটটাও তাদের ধরিয়ে দিতে হয়। নিতাই স্যার বড়দের কথার বড়খেলাপ কিছুতেই পছন্দ করেন না। তাই তাদের কথার বরখেলাপ করা নিষেধ। স্কুলের বিভিন্ন কাজ বড় ক্লাসের ছেলেদের উপর পড়লেও তারা এসব কঠিন কাজে ছোট ক্লাসের ছেলেদের দিয়ে করিয়ে নিত, কিন্তু বাহবা কুড়িয়ে নিত তারা। এ নিয়ে পদ্ম- সুজনের রাগের শেষ নেই। পদ্ম আর সুজন বহুদিন ধরে চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে সিরু ভাইকে একটা উচিত মত শিক্ষা দেওয়া যায়। সুজনের মাথায়ই প্রথমে বুদ্ধিটা এল। পদ্ম শুনে তো খুশিতে আটখানা।

গভীর রাত, সবাই ঘুমে একাকার। পাশের রুমে স্যারের নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ সময় সুজন জেগে উঠল। পদ্মকে ডেকে দিল। জিনিসপত্র যা কিছু দরকার সবকিছু ওরা আগেই জোগাড় করে রেখেছিল। চুপি চুপি নিঃশব্দে ওরা সিরু ভাইয়ের রুমে গিয়ে ঢুকল। তারপর রেজার দিয়ে পদ্ম সিরু ভাইয়ের মাথার চুল গুলো দুই পাশ দিয়ে খালি করে দিল। সিরু ভাই টেরই পেল না। কারণ তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। এই দুঃসাধ্য কাজটা করেছে সে নিজেই। রাতের বেলা সিরু ভাই তাকে পানি আনতে পাঠিয়েছিল। তখনই মিশিয়ে দিয়েছিল ঘুমের ঔষুধ। সিরু ভাইয়ের বর্তমান অবস্থা দেখে পদ্মর নিজেরই হাসি পেল। তারা আর বেশিক্ষণ সেখানে না থেকে সব কাজ সেরে ভাল মানুষের মত ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে হৈ চৈ শুনে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ব্যাপারটা কি তাদের আগেই জানা ছিল। তবে এই দোষ গিয়ে পড়ল সালাম ভাইয়ের উপর। কারণ তার বালিশের নিচে রেজার আর কেচিটা পাওয়া গেছে। তারপর আর কি, বেচারাকে খেতে হয়েছে একচোট্ মার! বর্তমানে সিরু ভাইয়ের যা অবস্থা তা দেখে আমাদের গম্ভীর হেডমাষ্টারও না হেসে পারবেন না। পদ্ম বেশ খুশি তার এ নাকানো অবস্থা করতে পেরে। সিরু ভাইকে এ অবস্থায় যারা দেখেছে তারা সবাই হেসে বলেছে, কিরে চুলের নতুন ডিজাইন করেছিস নাকি। সেদিন তার প্রেস্টিজে টান পড়ে গেল। পরে সেলুনে গিয়ে মাথা পুরো ন্যাড়া করে আসতে হলো।

সিরু ভাইকে ন্যাড়া করার ব্যাপারটা সবাই ভুলে যেতে বসেছিল, এমনকি সিরু ভাইও। কিন্তু হঠাৎ একদিন ফাঁস হয়ে গেল ওদের এ কুকীর্তিটা। ওরা দু’জন এসব নিয়ে হাসাহাসি করার সময় সিরু ভাইয়ের এক টিকটিকি তা শুনতে পায়। ফলে খবরটা রাতারাতি তার কানে পৌঁছে যায়। এ কথা শুনে সিরু ভাইয়ের রাগে একেবারে ফেটে যাওয়ার অবস্থা হল। আজ রাত্রেই তাদের আরো বিদ্ঘুটে অবস্থা করবেন বলে ঠিক করেন।

সুজনদের স্কুলের হেডমাষ্টার পেরেগ স্যার বউয়ের সাথে ঝগড়া করে ঠিক করেছেন আজ তিনি ঘরে থাকবেন না। তাই তিনি রাত যাপনের জন্য হোস্টেলে চলে আসেন। সুজন তথা পদ্মদের মাটিতে বিছনা পেতে শুতে হলো। আর তাদের জায়গায় শুলেন নিতাই স্যার।

রাতের বেলা প্রতিশোধের নেশায়, সিরু ভাই কেচি আর রেজার নিয়ে পদ্মদের খাটটার কাছে চলে আসে। পদ্ম কোন পাশে শোয়, তার তা ভাল করেই জানা আছে। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এমন অবস্থা করবো যাতে কেউ দেখলেও চিনতে না পারে। ওদের সেই বীভৎস্য চেহারাটা ভেবে তার খুব হাসি পেল। কিন্তু তিনি জানতেন না যে এখানে কে শুয়ে আছে! তবে নাক ডাকার শব্দ তার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু সে ভাবল এটা হয়ত পাশের রুম থেকে আসছে। কারণ পাশের রুমে পেরেগ স্যারও সমান তালে ডেকে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত রেজার দিয়ে সিরু ভাই নিতাই স্যারের দুই চোখের ভ্রূ-গুলোকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। কিন্তু মাথার চুল কাটার সময় তার টনক নড়ে গেল। পদ্মর মাথায় এত বড় টাক এল কি করে তার তা বোধগম্য হল না। কিন্তু ততক্ষণে স্যার জেগে গেছেন।

আর সিরু ভাইকেও হাতে-নাতে ধরে ফেললেন। স্যার চেচিয়ে পুরো হোস্টেল সজাগ করে তুললেন। তারপর তো সিরু ভাইয়ের উপর চলল সপ্তকান্ড। ঘুম থেকে উঠে স্যারকে পালকহীন কাকের মত দেখে সবার তো হাসিতে পেট ফাটার অবস্থা। স্যার সেদিন এতই চটলেন যে সাথে সাথে এই রাতেই সিরু ভাইয়ের টি.সি. হয়ে গেল। এ খবরে ছোট ক্লাসের ছেলেরা তো খুশিতে আটখানা। কিন্তু এ ঘটনা সৃষ্টিতে কৃতিত্ব কার তা তো বলাই বাহুল্য। তবে স্যারের জন্য ওদের দুঃখ হয়েছে বেচারার একেবারে নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে। ভ্রূ-চ্যুতি ফলে স্যারের ঘর থেকে বাহির হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত তার ভ্রূ-জন্মায়নি ততদিন তাকে এ অবস্থা পোহাতে হয়েছে।

প্রানের ভাষা

বাংলা ভাষা
প্রানের ভাষা
লক্ষ প্রানের নিত্য আশা
ফুলের মাঝে ছড়িয়ে থাকা
হাজার ভালবাসা ।

বাংলা ভাষা ছেলের প্রতি
মায়ের স্নেহ আশা
বাংলা ভাষা হাজার যুগের
স্বপ্ন রঙ্গে খাসা ।

বায়ান্নেরই ভয়াল দিনে
দিল যারা প্রান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
সে তো
তাদেরই দান ।

প্রানের ভাষা

প্রানের ভাষা
কবি : আরাফাত মুন্না
বাংলা ভাষা
প্রানের ভাষা
লক্ষ প্রানের নিত্য আশা
ফুলের মাঝে ছড়িয়ে থাকা
হাজার ভালবাসা ।

বাংলা ভাষা ছেলের প্রতি
মায়ের স্নেহ আশা
বাংলা ভাষা হাজার যুগের
স্বপ্ন রঙ্গে খাসা ।

বায়ান্নেরই ভয়াল দিনে
দিল যারা প্রান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
সে তো
তাদেরই দান ।

স্বপ্নের হ্রাস

রুপালী জোস্নারা ঝরে পড়ে
দিঘির জলে,
বাধ ভাঙা স্বপ্নেরা ছুটে চলে
কাটা তারের
বেড়া গলে।
নিরুদ্দেশে ছুটে চলা
ক্লান্তি আর অবসাদে থেমে যাওয়া,
তবু আমি শুনতে পাই
`ছুটে চলো' যুগান্তরী হাওয়া।
কে যেন আমায় স্বপ্ন দেখায় !
নিশ্চিত থাকি হবে না পাওয়া।
কিন্তু পাল্টে যায়,পাল্টে যায় ইতিহাস
আমার হাতের ইতিহাস ,
বিজয়ের পর তবু হয়
স্বপ্নের হ্রাস!