Monday, September 19, 2011

স্বপ্নের পাখি

                                  
প্রতিদিনই আবিরের মনটা খুব খারাপ থাকে।জীবনটাকে তার কেমন যেন একঘেয়ে মনে হয়। বন্দী পাখি খাচায় বসে যেমন ছট্ফট্ করে তার অবস্থা ঠিক তাই।মাঝে মাঝে তার কাছে নিজেকে যন্ত্রমানব মনে হয়।
প্রতিটা দিন প্রতিটা সময় তাকে নানা রকম ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে চলতে হয়।এইতো সকাল ছয়টা না বাজতেই আম্মু এসে তার ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে যায়। তারপর সে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে বইয়ের বোঝা নিয়ে স্কুলে চলে যায়। তার আব্বু তাকে স্কুলে দিয়ে আসে। তাকে স্কুলে দিয়ে এসে তার বাবা-মা চলে যায় নিজ নিজ অফিসে। আসার সময় বাড়ির চাকরটা তাকে স্কুলে থেকে নিয়ে আসে। তার আম্মু তাকে ফোনে বলে দেয় কখন কি করতে হবে। কখন খেতে হবে আবার কখন হোম ওয়ার্কগুলো করতে হবে ইত্যাদি। স্কুল থেকে এসে তারপর সে ঘরের ভিতর বন্দি। হয়ত টিভি দেখা নয়ত কম্পিউটারে গেমস খেলা ছাড়া তার আর কোন কাজ থাকে না। সারাক্ষণ টিভি দেখা কিংবা গেমস খেলতে কারই বা ভাল লাগে? আবির ঘরে একা বসে থেকে নানা কথা ভাবতে থাকে। সে একটু বাইরে ও যেতে পারে না। কারণ তার মায়ের মানা। মা বলে, বাইরে গেলে তুমি খারাপ হয়ে যাবে, বাইরে যায় যত্তসব বখাটে ছেলেরা। তাই বাইরে না যেতে মায়ের করা নির্দেশ। ঘরে সে কথা বলার মত একজন  মানুষ ও পায় না।
মাঝে মাঝে সে খাঁচায় বন্দি থাকা পাখিটার সাথে এক এক কথা বলতে থাকে। সে নানা কথা বললে ও পাখিটা তার কোন উত্তর দেয় না। শুধু তার দিকে চেয়ে ডাকতে থাকে। একদিন আবির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাখির খাঁচাটার সামনে একা একা কথা বলছিল। সে তার দুঃখের কথা পাখিটাকে শুনাতে লাগল। এমন সময় সে শুনতে পেল কে যেন বলছে, আবির তুমি দুঃখ করো না, আমি তোমাকে এখান থেকে মুক্ত কওে দিতে পারি। আবির বুঝতে পারল না কে কথা বলছে। সে চারদিক তাকিয়ে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না। সে ভাবতে লাগল, কে কথা বলছে? সেই কন্ঠটি আবার বলল; তুমি হয়ত ভাবছ তোমার আশেপাশে কেউ নেই অথচ কে কথা বলছে, তুমি খাঁচার পাখিটির দিকে তাকাও তাহলে বুঝতে পারবে আমি কে কথা বলছি। আবির খাঁচায় তাকিয়ে তো অবাক! তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না যে পাখিটি কথা বলছে! সে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, সত্যি তুমি কথা বলতে পার আমার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। তখন পাখিটি বলল, বিশ্বাস না হওয়ারই কথা, কারণ আমরা কোন দিন মানুষের সাথে কথা বলি না। আমরা তোমাদের মনের কথা ও বুঝতে পারি। আমি জানি তোমার দুঃখ আর আমার দুঃখ এক। আমিও তোমার মত খাঁচায় বন্দি। ইচ্ছা করলে ঘুরে বেড়াতে পারি না। তোমাকে আমার একটা কথা রাখতে হবে, আমি যে কথা বলতে পারি এটা তুমি কাউকে বলবে না। আবির পাখিটির কথায় রাজি হয়ে যায়। তার কাছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। কারণ সে-ই পাখিটিকে খাচায় বন্দি করে রেখেছে। সে আস্তে করে খাঁচার মুখটি খুলে দেয়। আর তখন পাখিটি খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। আবিরের পাখিটির প্রথম কথাটি মনে পড়ে। সে বলে আমি তো তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছি বন্দি খাঁচা থেকে, এখন বল তুমি কিভাবে আমাকে এই বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করবে। তখন পাখিটি বলল, হ্যাঁ আমি তোমাকে বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করব। আমি তোমাকে খোলা আকাশ, বন-জঙ্গল সব ঘুরিয়ে আনব। তার জন্য তোমাকে অনেক দিন বাবা-মা থেকে আলাদা থাকতে হবে। তুমি থাকবে দূর বহু দূরে। পৃথিবীর সব দেশ তুমি ঘুরবে। আবিরের প্রথমত পাখিটির কথা বিশ্বাস হয় না। পৃথিবী দেখার সখ তার অনেক দিনের তাই সে পাখিটির কথায় রাজি হয়ে যায়।
পাখিটি খোলা আকাশে এসে তার ডানাগুলো মেলে দেয়। আর তখন সে অদ্ভুদভাবে বড় হতে থাকে। আবির পাখিটির ডানায় চড়ে বসে। পাখিটি তাকে নিয়ে খোলা আকাশে উড়তে থাকে। আবির পাখিটিকে জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা তুমি এত বড় হলে কিভাবে? পাখিটি কিছ্্ুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, আমার বাড়ি দক্ষিন আমেরিকায়। কোন দেশ এখন আর মনে নেই। আমরা ছিলাম অনেক বড় জাতের পাখি। নিজের নামটা ও ভুলে গেছি অনেক দিন বন্দি থেকে। একবার শীতের সময় আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলাম। আমি তখন সদ্য উড়তে পারা একটি পাখি। বাংলাদেশে আসতে আমাদেও বহু বিপদেও সম্মুখীনহতে হয়েছিল। মা বলেছিল, বাংলাদেশ নাকি খুব সুন্দর একটা দেশ তবে এর মানুষগুলো নাকি খুব খারাপ। তারা নাকি অতিথি পাখিদের মেরে ফেলে তাই তিনি আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস শেষ পর্যন্ত আমাকেই ওদের হাতে ধরা পড়তে হয়েছিল। আমাদের একটা নিয়ম ছিল মানুষের হাতে ধরা পড়লেই আমরা ছোট হয়ে যাই। শিকারীরা আমাকে হঠাৎ ছোট হতে দেখে তারা খুব অভাক হয়েছিল। আমাকে নিয়ে তারা নানা রকম গবেষণা করল কিন্তু শেষে তথ্যে কিছুই পাওয়া গেল না। আর তখন তোমার আব্বু আমাকে অনেক টাকা দিয়ে কিনে বাড়ি নিয়ে যায়। তখন থেকে আমি তোমার দুঃখগুলো উপলব্ধি করতে লাগলাম। বুঝলাম আমার মতো তোমার ও একই কষ্ট। আর তুমি আমাকে মুক্ত করে দেওয়ায় আবার আমি আগের মত হয়ে গেছি। পাখিটি কথাগুলো বলার সময় তার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। আবির ও পাখিটির কষ্ট বুঝতে পারল। সে (পাখিটি) আজ প্রায় তিন বছর তার মা-বাবাকে দেখতে পারেনি। সে ছিল তাদেও থেকে অনেক দূরে।
মুহূর্তের মধ্যে পাখিটি তার আগের সব কষ্ট ভূলে গেল। সে নতুন মুক্ত স্বাধীন জীবনকে উপভোগ করতে লাগল। আবিরের আনন্দ যেন আর ধরে না। সে কখনো নদী দেখিনি। শুধু বইয়ের পাতায় নানা বর্ণনার কথা সে শুনেছে। আজ সে নিজের চোখে নদী দেখছে, নৌকা, গাছ-বন দেখছে সত্যিই তার কাছে ব্যাপারটা অন্যরকম লাগছে। বহু সাগর নদী পেরিয়ে তারা চলে এল আমাজান বনে। এ সময় তার (পাখিটির) সাথে দেখা হলো তার পুরনো বন্ধুদের। তারা প্রথমে তাকে চিনতে পারল না। পরে যখন সব ঘটনা শুনল তখন তারা সবাই আনন্দে কেঁদে দেয়। তাদের কাছে সে তার বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, তোমাকে হারিয়ে তারা আর এই দেশে ফিরে আসেনি। আমরা ঠিকই চলে এসেছি। কিন্তু এখনো তারা তোমার অপেক্ষায় বসে আছে। তাদেও কথা শুনে পাখিটি খুব ব্যাকুল হয়ে যায়। সে পুনরায় বাংলাদেশের দিকে ফিরে আসতে লাগল।
এদিকে আবিরকে না পেয়ে তার বাবা হুলস্থ’ূল কান্ড করে বসিয়েছে। তারা পুলিশ, পত্রিকা ,টেলিভিশন সব জায়গায় খবর দিয়ে একাকার করেছে। খুব আদরের সন্তান তাই তাকে না পেয়ে তার বাবা-মার উম্মাদ হওয়ার অবস্থা!
আবির বাইরের পৃথিবী যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয়।সে পাখিটা তাকে পৃথিবীর সব দেশ ঘুরিয়েছে। পৃথিবীর সব ভাস্কর্য সে মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। সে কখনো ভাবেনি পৃথিবী এত সুন্দর! সে যত দেখে তত মুগ্ধ হয়। আবির নিজেকে সবচে সুখী মানুষ ভাবতে লাগল।
দেখতে দেখতে তারা আবার চলে এল বাংলাদেশে। সেই পাখিটার সাথে তার বাবা-মার দেখা হয়।তারা তাকে দেখে আনন্দে কেঁদে দেয়। অতি আদরে পাখিটাকে তার মা বুকে তোলে নেয়। মায়ের এ ভালবাসা দেখে আবিরেরও তার মায়ের কথা মনে পড়ে।মায়ের মুখটা তার চোখে ভাসতে থাকে।সে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্না করতে থাকে।মা পাখিটা আবিরের কথা জানতে চায়। বাচ্চা পাখিটা আবিরের সব কথা খুলে বলে।আবিরের জন্য মা পাখিটা খুব দুঃখ করে।তবুও তাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে আসার জন্য বলে।সে বলে, যত দুঃখ কষ্ট হোক কোন বাচ্চা তার মায়ের সান্নিধ্য ছাড়া থাকতে পারে না।
 বাচ্চা পাখিটা আবিরকে তার বাসায় দিয়ে যায়।পাখিটাকে বিদায় জানাতে আবিরের খুব কষ্ট হয়। তার চোখ দিয়ে হঠাৎ টুপটুপ করে পানি পড়তে থাকে।
                           *****************************
আবিরকে ফিরে পেয়ে তার বাবা-মা যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। তারা মা তাকে আনন্দে কোলে তোলে নেয়। তখন আবিরের সেই পাখিটার কথা মনে পড়ে।সত্যিই তো, মা ছাড়া কে-ই বা থাকতে পারে। তবে তার বাবা গোয়েন্দার মতো নানা প্রশ্ন করতে থাকে। আবির পাখিটার কথা কিছুই বলে না।সে কোন রকমে কথা কাটিয়ে যায়।
সেদিন থেকে আবিরের মা-বাবা তার কষ্টগুলো বুঝতে পারে। আবিরের আম্মু তার চাকরিটা ছেড়ে দেয়। স্কুলের পর তিনি আবিরকে নিয়ে গল্পের বই কিনতে যায়, নানা জায়গায় ঘুরিয়ে আনে। রাতে পড়া শেষ হলে তাকে নিয়ে বসে বসে গল্প শোনায়।তখন থেকে আবিরের সব শূন্যতা কেটে যায়। তার দিনগুলো কাটে বেশ আনন্দের সাথে। জীবনটাকে তার কাছে আর যান্ত্রিক মনে হয় না। সপ্তাহে একবার তার বাবা তাকে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বেরিয়ে আসে।আবির মনে মনে সেই পাখিটাকে কৃতজ্ঞতা জানায়।
খাঁচার শূন্যতা এতদিন তার বাবা-মার চোখে পড়েনি। কারণ খাঁচাটা তার রুমে থাকায় কেউ অতটা খেয়াল করেনি।  কিন্তু সেদিন বিষয়টা তার মায়ের চোখে আটকে যায়। সে জিজ্ঞাসা করে, পাখিটা কোথায়? আবির নিঃসঙ্কোচে সে দিনের কথা সব খুলে বলে। কিন্তু তার আম্মু কিছুই বিশ্বাস করে না। তবে ওর সামনে ওরটাই বিশ্বাস করেছে এমন ভাব দেখাল। তার আম্মু হয়তো ভেবেছে, পাখিটাকে ছেঁড়ে দিয়ে সে মিথ্যে গল্পের ফাঁদ পেতেছে। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করতে পারল না যে, সে দিনের ঘটনাটা ছিল সত্যি! তবে সে দিনের ঘটনাগুলো আবিরের কাছেও কেমন যেন রূপকথার মতো মনে হয়।
মাঝে মাঝে স্বপ্নেও পাখিটা আবিরের সাথে দেখা করে যায়। তাই আবির পাখিটার নাম দেয় ‘স্বপ্নের পাখি’। সে এখনো মাঝে মাঝে স্বপ্নে পাখিটার সাথে ঘুরে বেড়ায়!

সুমনের ভূতপ্রীতি

   একদিন আমি আর সুমন বল খেলে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। দু’জনের মধ্যেই আজ ভয়, বাড়ি গেলে মার খেতে হবে।কিভাবে মার খাওয়া থেকে বাঁচা যায় সে বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করতে লাগলাম। কিন্তু কোন উপায়ই খুঁজে পেলাম না।
    দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটছি পায়ের আওয়াজগুলোও ভূতোরে মনে হচ্ছে! গাছের শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজটাও  যেন ভয় পাইয়ে দিচ্ছে! ক্রমে চারদিকে নিকশ কালো অন্ধকার হয়ে এলো। আমার বুক দুরু দুরু করতে লাগল। আমি এমনিতেই ভীতু, তার উপরে এমন পরিবেশ! তাই সুমনের হাত ধরে ভয়ে কাপছি!
   আমার মতো সুমন কিন্তু অতো ভয় পেতো না।ওর ভূতে বিশ্বাস নেই।ভূতের কথা বললে সে বলে, ‘যে দিন ভূত এনে সামনে দেখাতে পারবি, সেদিনই বিশ্বাস করব।আসলে ভূত-টূত বলে কিছু নেই!’ ওকে কতবার ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাবার চেষ্টা করেছি,কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা হয়েছিল।
      আমরা যখন গগণ শেখের বাড়ির সীমানায় পৌঁছলাম ঠিক তখন ঝোপ থেকে একটা সাদা মূর্তি বেরিয়ে আসল। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল।প্যান্টটা ভিজে গেল কিনা বুঝলাম না! ‘ভূত, ভূত’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
     ভূতটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ভয়ে আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম। ভূতের কথা শুনে সুমনের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল!সে বলল, ‘ওহহো, জীবনে কখনো ভূত দেখিনি, আজ আমাকে ভূত কেমন দেখতেই হবে!’ এ কথা বলে সে ভূতের দিকে এগিয়ে গেল! আমি তাকে বার বার নিষেধ করলাম, যাসনে, ভূত তোর ঘাড় মটকাবে।কে শোনে কার কথা!সে এগিয়ে গেল ভূত দেখতে।
      তাকে এভাবে হঠাৎ করে এগিয়ে যেতে দেখে ভূত বাবাজিও হয়ত ভয় পেয়েছে। তাই বার বার বলতে লাগল, হাঁউ মাঁউ খাঁউ মাঁনুঁষেঁরঁ গঁন্ধঁ পাঁও।যাঁরে পাঁবোঁ কাঁছেঁ ঘাঁড় মঁটঁকেঁ নেঁবঁ গাঁছেঁ। সুমন ভূতের কাছে গিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলল,‘ভূত ভাই আমি কখনো ভূত দেখিনি, আপনি যদি দয়া করে একটু আপনার চেহারাটা ভালো করে দেখাতেন তাহলে হয়ত আমার চিরদিনের আশা পূরণ হতো।’
    তখন ভূত বলল, হেঁহ্ঁহেঁ আঁমাঁরঁ কোঁনঁ চেঁহাঁরাঁ নেঁই, শঁরীঁরঁ নেঁই।আঁমি থাঁকি বাঁতাঁসে, হিঁহঁহি।
     সুমন ছিল নাছোড়বান্দা সে যা বলে তাই করে ছাড়ে। আমিও তা টের পেয়ে গেলাম! কিন্তু তবুও ভয়ে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিল!
   সুমন ভূতের চেহারা দেখার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল।আমি ভাবলাম ভূতের হাতে বুঝি ওর প্রাণটাই যায়! ঠিক তখন ভূতের ভয়ার্ত কন্ঠে শুনলাম, সাঁবঁধাঁন! গাঁয়েঁ হাতঁ দিঁবিঁ নাঁ। সেও কম কিসে! ভূতের কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।
      ওর এভাবে টানাটান দেখে আমারও ভয় কেটে গেল। আমিও ওর সঙ্গে যোগ দিলাম।ভূতের চেহারা দেখার ইচ্ছা আমারও হলো।দু’জনের টানাটানিতে ভূতের পড়নে থাকা উপরের সাদা কাপড়টা খুলে গেল।
     একি! এ তো আমাদের ক্লাসের  ভল্টু। ওর পরিচয় প্রকাশ পাওয়াতে বেচারা কাঁদতে লাগল।আমাদেও ভয় দেখাতে এসে বেটা নিজেই নাকানি-চুবানি খেয়ে গেল।দু’জনে মিলে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। সেদিন থেকে ভূতের প্রতি আমিও বিশ্বাস হারালাম। ভয় পেলেই মনে হতো , ভূত বলতে কিছুই নেই।এসব  হচ্ছে মনের ভীতি। সুমনের ভূতের প্রতি এত কৌতূহল থাকাতেই তো ভূতটাকে ধরতে পেরেছিলাম।

Friday, September 16, 2011

প্রেম নিবারণ কমিটি

এলাকার ভিতরে মুহিদ ভাই বেশ সাংগঠনিক লোক হিসেবে পরিচিত। যে কোন মুহূর্তে যে কোন সংগঠন দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন। তাই ওনার সাথে আমাদের সখ্যতাটা ও বেশ। কারন ওনার সংগঠনের প্রথম সারির সদস্য হিসেবে তো আমরাই থাকি। নতুন কোন সংগঠন চালু করলেই প্রথমে ডাক পড়ে আমাদের।
মুহিদ ভাই এ পর্যন্ত দশের উপর সংগঠন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একটাও বেশিদিন টিকেনি। ‘চোর ধরা কমিটি’ তৈরি করে তো একবার পুরো গণ-ধোলাই খেতে হয়েছিল। তারপর ও ওনার সংগঠন প্রীতি কমেনি।
সেদিন তিনি বালুকে দিয়ে আমায় খবর পাঠালেন নতুন সংগঠনের কথা বলে। কি আর করব এলাকার বড় ভাই বলে কথা, যেতে তো হবেই।
নতুন সংগঠনটা বেশ জোরালো ভাবেই শুরু করেছেন বলে মনে হলো। সংগঠনের প্রথম সভায় আমার মতো এলাকার অনেক ছেলেই যোগ দিয়েছে। নতুন সংগঠনের কাজ কি এখনো তা কারো কাছে খোলাস নয়। সভায় এসেই মুহিদ ভাই শুরু করল, “বুঝলিরে বাবলু, ইদানিং ছেলেদের ভিতর ভাইরাসের মত যেভাবে প্রেম সংক্রমন হচ্ছে এলাকার অবস্থা খারাপ হতে আর বেশি দিন নেই। ছেলে পেলে সব পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রেম-পত্র লেখায় ব্যস্ত। আর বাপের পকেট চুরি তো অহরহ ঘটছেই। মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় এ প্রেমের কারণেই ঘটছে। তা বন্ধ করা না গেলে ছেলেগুলো সব বখে যাবে।”
মুহিদ ভাইয়ের কথা শুনে দেখলাম নুজুর মুখটা বেশ শুকিয়ে গেছে। বেচারা সদ্য মন আদান প্রদানে ব্যস্ত। গোগলটাকে ও দেখলাম বেশ চুপসে যেতে।
তারপর তিনি আবার শুরু করলেন, “তোরা তো এলাকার কোন খবর রাখিস না। তাহলে বুঝতি প্রেমের ভাইরাস ছেলেদের কিভাবে সংক্রমন করছে। মাঝির বার বছরের ছেলেটা ওপাড়ার সখিনাকে নিয়ে পালিয়ে, ব্যাপারটা ভাবতে পারিস তোরা। তাছাড়া ইদানিং বাবলুর ছোট ভাইটাকে ও মেয়েদের পেছনে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।”
এ কথা শুনে আমার বেশ রাগ চেপে গেল। তাই দাঁড়িয়ে বললাম, “এ কী বলছেন মুহিদ ভাই। যে আমি জীবনে কখনো মেয়েদের দিকে তাকাইনি। আর আমার ভাই!! না, বিশ্বাস হয় না।”
এবার মুহিদ ভাই বেশ মুড নিয়ে বললেন, “বিশ্বাস হবে কেমন করে, আমার ও তো প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। আর এ কারণেই তো আজ তোদের ডাকলাম। আমরা একটা নতুন কমিটি গঠন করব যার নাম হবে ‘প্রেম নিবারণ কমিটি’ এ কমিটির কাজ হবে এলাকার ছেলেদের মন থেকে প্রেমের ভাইরাস দূর করা। আর যত প্রেম কাহিনী চলছে সবগুলোর সমাপ্তি টানা “
সবাই মিলে ভেবে দেখলাম ব্যাপারটা আসলে খারপ না। বেশ জনকল্যানমূলক কাজ হবে। তাছাড়া এলাকার ভাল ছেলেদের তালিকায় আসার এটা একটা বড় সুযোগ। ব্যাপারটা নিয়ে তাই আমরা সবাই বেশ উৎসাহী হয়ে পড়লাম। আর এরই মধ্যে আমরা পুরোদমে কাজও শুরু করে দিলাম। মুহিদ ভাইয়ের কথামতো, আমরা সবাই মিলে প্রেম বিরোধী স্লোগান দিয়ে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড, পোষ্টার তৈরি করলাম। তাতে লেখা ছিল প্রেমকে ঘৃনা কর প্রেমিককে নয়,প্রেম করার ছেয়ে মুরগি পালা ভাল। আর প্ল্যাকার্ড, পোষ্টার নিচে বেশ বড় করে লেখা ছিল প্রচারে ‘প্রেম নিবারণ কমিটি’।
আমাদের তৈরি এই প্ল্যাকার্ড আর পোষ্টারগুলো বেশ কাজে লাগল। কিছু কিছু ছেলে মেয়ে এই পোষ্টারগুলো দেখেই লজ্জায় প্রেম করা ছেড়ে দিল। তাছাড়া এলাকার মুরুব্বিরা এই প্রেম বিরোধী সংগঠনের বেশ প্রসংশা করতে লাগলেন।
বেশ কিছুদিনের ভিতর এই প্রেম নিবারন কমিটির জয় জয়কার পড়ে গেল। আর মুহিদ ভাই তো ভাবে একেবারে ভাবুক। কেউ সংগঠনের প্রসংশা করলে তিনি মুগ্ধ হয়ে তা শ্রবন করেন তারপর সংগঠনের সুদূর প্রসারী কিছু কাজের কথা শুনিয়ে দেন। যা শুনে লোকে বাহ্্! বাহ্! করে।
পাড়ায় কুখ্যাত প্রেমবাজ হিসেবে রকি খুবই সুপরিচিত। ওকে দিনের বেলায় গার্লস স্কুলের সামনে ছাড়া খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। সুন্দর কোন মেয়ে দেখলেই তার পিছে ঘুর ঘুর করে। ও যে এখন পর্যন্ত কত মেয়ের সাথে প্রেম করেছে তার সঠিক হিসাব ওর নিজের কাছে ও অজ্ঞাত। ওর মত কুখ্যাত প্রেমিককে কি করে ঠিক করা যায় সেটাই আমাদের প্রেম নিবারণ কমিটির পরবর্তী মিশন। ওকে যে এ থেকে দূরে রাখা সোজা নয় সেটা আমাদের সবারই জানা ছিল কিন্তু অসাধ্যকে সাধন করাই তো মানবের কাজ। তাই আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।
সেদিন দুপুরে রকির সাথে আমার হঠাৎ দেখা। একটা সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমার দিকেই আসল। তারপর সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষতে পিষতে আমায় বলল, “শুনলাম তোরা নাকি প্রেম বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিস। ওসব না করে, বাসায় গিয়ে পিটার খা সেটা আরো ভাল হবে।” কথাটা শুনে আমার বেশ রাগ হল। কিন্তু তবু ও নিজেকে শান্ত রেখে ওকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। প্রেমের অপকারিতা নিয়ে দীর্ঘ একটা বক্তব্য ও দিয়ে দিলাম। কিন্তু সবই মনে হয় বৃথা হল। সে আমায় থামিয়ে দিয়ে বলল, “তোর মত চ্যাচকা প্রেমের কি বুঝিস রে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,জীবনানন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম সবই তো প্রেমের গীত গেয়েছেন। শেক্সসপীয়ারের মত মানুষ লিখেছেন রোমিও জুলিয়েট। আহ্! প্রেম কি মধুর সেটা বুঝার বয়স কি তোদের হয়েছে। যত্তসব বুজরুকির দল।” তারপর যেই প্রেম স্বর্গ হতে এসে, জীবনে অমর হয়ে রয় এই গানটা গাইতে গাইতে চলে গেল।
রকির অপমানটা আমার বেশ গায়ে লেগে রইল। তবে কবি সাহিত্যিকদের উপর বেশ রাগ হল। সবাই তো প্রেম নিয়ে ইচ্ছামত কবিতা গল্প লিখেছেন। কিন্তু প্রেম বিরোধী একটা কবিতা ও খঁজে পাওয়া যায় না, যা ছেলেদের শুনানো যেত। তাই নিজেই প্রেম বিরোধী কবিতা লেখা শুরু করলাম। আর সেগুলো রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের নামে চালিয়ে সবাইকে পড়ে শুনাতে লাগলাম। রকির প্রেম নিবারন করার ভাল একটা আইডিয়া ও পেয়ে গেলাম মুহিদ ভাইয়ের কাছে। মুহিদ ভাই মানুষটা যে জিনিয়াস বুঝাই যায়।
পরিকল্পনা মত প্রথমে রকির বর্তমান প্রেমিকাকে খঁজে বের করা হল। তারপর তার কাছে ইচ্ছামত রকি সর্ম্পকে প্যাচ লাগানো হল। ফলে দেখা গেল দু দিনের ভিতর রকি চ্যাকা খেল। ছেলেটা দমবার পাত্র নয়, কিছু দিনের ভিতর নতুন একটা জুটিয়ে ফেলল। আমরা ও আশা দমবার নই, আগের পরিকল্পনাটাকেই কাজে লাগালাম। শেষ পর্যন্ত আমরাই সফল হলাম। বার বার চ্যাকা খেয়ে রকি প্রেমের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ল। সেদিন আমাদের সভায় যে নিজেই এসে হাজির হল। প্রেম নিবারন কমিটিতে নিজের নাম লিখিয়ে বলল, “বুঝলি বাবলু প্রেম-টেম ওসব ভুয়া। জীবনে কোন কাজে লাগে না। এসব থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভাল।” রকির মত প্রেমবাজ ছেলেকে যেহেতু আমরা ঠিক করতে পেরেছি সুতরাং বলা যায় আমরা সফল। এমন একটা সফল সংগঠন করতে পেরে আমরা সবাইতো খুশিতে আটখানা। আমাদের সফলতায় পাড়ায় আর স্কুলে সবার মুখে মুখে আমাদের নাম। সবাই অন্য রকম দৃষ্টিতে আমাদের দেখতে লাগল।
আমরা যখন প্রেম নিবারন কমিটি নিয়ে ব্যস্ত আছি, মুহিদ ভাইকে দেখলাম কেমন জানি অন্যমনস্ক। সংগঠনকে তেমন একটা সময় দিতে চান না। সংগঠনের ব্যাপারে তাকে বেশ নিরুৎসাহিত দেখা গেল। ইদানিং তার খোঁজ পাওয়া ও কঠিন, কোথায় কোথায় যেন যান। তাছাড়া এখন নাকি কবিতা লেখাও শুরু করেছেন। ওনার ব্যাপার স্যাপার কারো বোধগম্য হল না।
সেদিন কলেজ মাঠে বেড়াতে গিয়ে ব্যাপারটা আমাদের কাছে খোলাসা হয়ে গেল। কলেজের পুকুর ঘাটে বসে ওনাকে এক মেয়ের সাথে আলাপ করতে দেখলাম। ওনি যে ইদানিং প্রেমে পড়েছেন সেটা আর আমাদের বুঝতে বাকি রইল না। কিন্তু আমরাই প্রেম বিরোধী আন্দোলন করে আমরাই যদি... ... ... । ব্যাপারটা আমি আর ভাবতে পারছি না। সামনে যে মহাবিপদ আছে সেটা অন্তত টের পাচ্ছি। ভয়াবহ ব্যাপার থেকে বাচতে হলে কয়েকদিন গা ঢাকা না দিলেই নয়!


যারা ‘সুড়ঙ্গ বন্দী ‘ উপন্যাসটি পড়েননি তারা  ক্লিক করুন। পুরোটা একসাথে পাবেন।

অবুঝ

এক.
    
     দু’দিন ধরে রনির বানরটা বেশ দৌরাত্ত শুরু করেছে! সকাল-বিকাল তাকে ঘরে খুঁজেই পাওয়া যায় না। সারাদিন শুধু এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। আর লোকদের জিনিস চুরি করে এনে আপন খেলায় মাতে। কারও গাছে ফল দেখলে তার যেন আর সয্য হয় না। ফল খাওয়ার লোভে সারাক্ষণ সে গাছের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। সুয়োগ পেলেই গাছে চড়ে বসে। কাচা-পাকা সামনে যা পায় সব ফল পেড়ে কিছু এদিক-ওদিক ছুঁড়ে মাড়ে আর কিছু বাড়ি এনে মজা করে খায়। তার জন্য রনিদের অনেক গাল-মন্দ শুনতে হয়।
    রনি বাড়িতে না থাকলে বানরটা এ সুয়োগ পেয়ে যায়। তাকে ভয় না পেলে ও ভক্তি করে। তার কথার কখনো অবাধ্য হয় না। রনি বাড়িতে থাকলে বানরটা তার পিছনে অনুগত ভৃত্যের মত ঘুরে বেড়ায়। রনি যে কাজ করতে বলে যতটুকু করার সাধ্য চেষ্টা করে।
       বানরটা মাঝে মাঝে অন্যের গাছের ফল চুরি করে রনির টেবিলে এনে রেখে দেয়। রনি এসে দেখলেই বুঝে এটা কার কান্ড। সে বানরটাকে কড়া কথা বললে ওটা যেন আরো বেশি মজা পায়। আনন্দে গদ গদ করে তার কাঁধে গিয়ে বসে। সে যদি বানরটার গালে দুটো থাপ্পরও দেয় সে মনে করে তাকে যেন ধরে আদর করা হচ্ছে। তাই রনি মাঝে মাঝে এসব নিয়ে বানরটার উপর খুবই ক্ষেপে যায়। বানরটাকে সে বেশি ভালবাসে বলে তার রাগ মুহূর্তেই দমে যায়।
    মাঝে মাঝে বানরটা অদ্ভূত সব কান্ড ঘটিয়ে বসে। এইতো সেদিন বানরটা রনির প্যান্ট, শার্ট আর তার দাদুর মোটা প্রেমের চশমাটা পড়ে এমন ঢং সেজেছিল ওকে সেদিন যে-ই দেখেছে না হেসে পারেনি। দেখে যেন মনে হয়েছে ছোট    কোন ছেলে হয়ত বানরের অভিনয় করছে। ওর দাদু তার চশমা চুরি করাতে বানরটার উপর ভীষন ক্ষেপে গিয়েছিল। লাঠি দিয়ে মারার জন্য অনেকবার তেরে ও গিয়েছিল। কিন্তু বানরটা এমনি পাজি যে তার দাদুর লাঠি নিয়ে দে ছুট। দাদু ও ছুটল বানরটার পিছনে। দুজনের মধ্যে দৌড় খেলার মতো প্রতিযোগিতা শুরু   হয়। বানরটা বুদ্ধি করে গাছে ওঠে পড়ে। তার দাদু ও কম কিসে! তিনি ও উঠতে গেলেন গাছে। গাছটা ছিল খুবই চিকন আর এর ডালগুলো ছিল খুব নরম। বানরটা স্বাচ্ছন্দে উঠতে পারলে ও, দাদু উঠতে গিয়ে পড়ল বিপাকে। হঠাৎ গাছের নরম ডালগুলো মড়াৎ করে ভেঙ্গে দাদু চিৎপটাং হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর তখন বানরটা আনন্দে হাততালি দিতে থাকে। এদিকে দাদুর মাটিতে পড়ে কোমর যায় যায় অবস্থা! এরপর টানা তিন দিন দাদুকে একটানা শোয়ায় থাকতে হয়েছে। সেদিন থেকে বানরটা দাদুর দু’চোখের বালি হয়ে যায়।


দুই.
    রনি তার বানরটার দুষ্টুমি ব›ধ করতে তাকে স্কুলে নিয়ে যায়। স্কুলের সামনের গাছটায় তাকে বসিয়ে রনি ক্লাসে চলে যায়। স্কুলের অন্যান্য ছেলেরা বানরটাকে দেখলে তার পাশে এসে ভিড় জমায়। বানরটাও তাদের সাথে দুষ্টুমি করা শুরু করে দেয়। হয়ত কারও কলম নিয়ে বিড়ি খাওয়ার অভিনয় করে কিংবা কারো প্যান্ট ধরে ঝুলে থাকে। আর তা দেখে অন্যান্য ছেলেরা সশব্দে হেসে উঠে। কেউ কেউ আবার ফাজলামো করে চকলেটের খোসায় মাটি ভরে বানরটাকে খেতে দেয়। বানরটা চকলেট পাগল তাই দেওয়ার সাথে মুখে পুরে দেয়। আর যখন দেখে এ অবস্থা তখন থুথু করে সব ফেলে দেয়। আর যে এই কান্ড করেছে তাকে পিছু তাড়া করে।
       যদি তার হদিশ না পায় তখন টিচারদের কাছে গিয়ে নালিশ করে। কথা তো বলতে পারে না, তাই টিচারদের জামা ধরে টেনে নিয়ে আসে। আর যে ছেলে এ কান্ড করেছে তাকে দেখিয়ে দেয়। টিচাররাও অনেক দিন বানরটাকে দেখতে দেখতে তার কিছু কথা বুঝে গেছে। আর তখন তারা বানরটাকে দেখানোর জন্য হালকা পিটুনি লাগায়। এ দৃশ্য দেখে সে আনন্দে হাততালি দিতে থাকে।
    অনেক সময় সে রনির কথাও অমান্য করে। রনি তাকে গাছে উঠে বসে থাকতে বলে কিন্তু একদিন তার আদেশ অমান্য করে বানরটা ক্লাসে এসে বসে থাকে। সবার পিছনের বেঞ্চে এমন ভাব নিয়ে বসে ছিল যেন মনে হচ্ছে কি মনোযোগ দিয়েইনা পড়া শুনছে! কেউ তখন ও লক্ষ্য করেনি বানরটা যে ক্লাসে। ক্লাসে ঢুকলেও সে কোন হই-চই কিংবা ডাকাডাকি করল না। শান্ত ছেলের মত বসে থাকল আর চোখটা ব্লাকবোর্ডের দিকে। প্রথমে বিষয়টা মাষ্টার মশাইয়ের চোখেই ধরা পড়ল। মাষ্টারমশাই তাকানোতে অন্যান্য ছেলেরাও সেদিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। রনিও তখন ক্লাসে বসা ছিল। এ অবস্থা দেখে তার রাগ চরমে উঠে। কিন্তু সে মাষ্টার মশাইয়ের সামনে অতটা রাগ দেখাতে পারল না।
        বানরটাকে গাছে বসিয়ে দিয়ে আসার জন্য সে তাকে ধরতে গেল কিন্তু মাষ্টার মশাই মানা করলেন। তিনি বললেন, থাক না বসে, ও তো আর ক্লাসের কোন অসুবিধা করছে না। তিনি হঠাৎ কথা কাটিয়ে বললেন, বানরটা তোমাদের থেকে আরো ভাল, দেখ না কি মনোযোগ দিয়েই না কথা শুনছে! আর তোমরা তো কথা বলেই যাও ক্লাসে কোন মনোযোগই দিতে চাও না। কি! ঠিক বলিনি?
 এ সময় রনি উচ্চস্বরে বলে উঠে, জ্বি স্যার!
আর অন্য ছেলেরা তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। মাষ্টার মশাই বানরটার প্রশংসা করাতে রনির বানরটার প্রতি ভালবাসা যেন আরো বেশি বেড়ে যায়।
    এত দিন কেউই জানত না যে বিদ্যুৎ স্যারের মাথায় টাক ছিল। কিন্তু সেদিন তার বানরটার কারণে এ কথা ফাঁস হয়ে যায়। স্যার তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন স্কুলের সামনের কড়–ই গাছটার নিচে। আর বানরটা ছিল গাছে। হঠাৎ বানরটা কি না কি ভেবে স্যারের ঘাড়ে গিয়ে বসল। স্যার বানরটাকে ঘাড় থেকে ফেলে দিতে চাইলেন। কিন্তুু প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন। পরে বানরটা নিজেই সরে গেল। তবে যাওয়ার সময় স্যারের নকল চুলগুলো টান দিয়ে নিয়ে গাছে উঠে যায়। স্যার তো পরচুলা হারিয়ে সবার সামনে পুরো বেকুব বনে গেলেন! বানরটাকে অনেক কিছুর লোভ দেখিয়েও তা আর উদ্ধার করতে পারলেন না।
      আর সেদিন স্যারের এ বিষয়টা ছিল স্কুলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। ছাত্ররা স্যারকে দেখলেই মুচকি হাসা শুরু করল। স্যার বানরটার উপর সেদিন এতই রেগে যান যে, বানরটাকে তিনি স্কুলে না আনার জন্য বারণ করে দেন।
    রনির বানরটার কারণে স্কুলের ছাত্ররা অনেকবার স্যারদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। এর জন্য অবশ্য অন্যরা বাঁচলেও রনির ঠিকই মার খেতে হতো। কারণ তার বানরটা টিচারদেও বেত চুরি করে নিয়ে যেত। ফলে স্যাররাও আর মারার সময় বেত পেতেন না। তারা ভেবেই নিত যে এটা ঐ বানরটার কাজ। এতে দোষ এসে পড়ত রনির উপর। আর তখন রনির ভোগ করতে হতো পুরু শাস্তিটুকু। বানর পালার কারণে তাকে নিয়ে স্কুলের ছেলেরা অনেক কথা বলত। স্কুলে সবাই তাকে ‘বানর পালা রনি ’ বলে ডাকত।


তিন.

       প্রায় তিন মাস হলো রনি এই বানরটাকে পালছে। অথচ তার একটা নামও এখনো দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি বললে ভুল হবে কারণ সে মনের মত একটা নাম এখনো খুঁজে পায়নি। একেক জন একেক নাম দিতে বলে কিন্তু কারোটাই তার তেমন পছন্দ হয়নি। তিনমাস চিন্তা করেও সে একটা ভাল নাম খুঁজে পায়নি। এ কথা শুনে অনেকেই হাসে। রনি অবশ্য কে কি বলে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না! সে শুধু নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অন্যে কি বলে তা যেন শুনতে ও চায় না। শেষে অনেক চেষ্টা করে মাথা ঘামিয়ে রনি তার নাম ও তার প্রিয় খেলোয়ার রিকি-পন্টিয়ের নামের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে বানরটার নাম দেয় ‘ররি’। এ নাম শুনে অনেকেই তাকে টিট্কারি করে। রনি ওসব কানে ও তোলে না। সে বলে, আমার বানর আমি যা ইচ্ছা তাই নাম দেব তাতে তোদের কি? মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বানরটা বুঝে গেল যে তার নাম ররি। ররি বলে ডাকলেই সে ছুটে আসে। তার নিজের একটা নাম থাকাতে বানরটাও যেন খুশিতে গদগদ!
    একদিন রনি স্কুল থেকে এসে দেখে টেবিলের উপর তার বই খাতাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ঘরের কোনায় চোখ যেতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। ররি (বানরটা) তার নতুন কেনা বইগুলোর উপর কলম দিয়ে কি যেন আঁকিবুকি করছে। তাকে দেখেও বানরটার মধ্যে কোন ভয়ের চিন্থ দেখা গেল না। তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসির ভান করে ররি আবার নিজ কাজে মন দিল। রনি টান দিয়ে বানরটার কাছ থেকে তার বইগুলো কেড়ে নিল। আর বানরটাও তখন কিচ্ কিচ্ আওয়াজ শুরু করে দিল।
রনি জোরালো কন্ঠে বলল, চুপ কর। ওর কথা শোনার সাথে সাথে ররি চুপ হয়ে যায়। সে আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রনি বইয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে তার মুখটা রক্তশূন্য হয়ে যায়। ররি তার বইগুলো সব ছিঁড়ে, নানা রকম আঁকিবুকি করে একদম পড়ার অযোগ্য করে তুলেছে। রনি এ কথাটা তার বাবা-মাকে কিছুদিন জানাল না। কারণ তারা জানলে হয়ত বানরটাকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে! তবে সে দিন থেকে রনি বানরটা তথা ররিকে শিকল দিয়ে আটকে রাখত। কারণ কথাই আছে, ‘আদর দিয়ে পুষলে বানর মাথায় উইঠা নাচে।’


চার.
    এতক্ষণ তো ররি সম্পর্কে অনেক কথাই হলো। কিন্তু বানরটা রনির কাছে এলো কিভাবে তা এখন ও তোমাদের বলা হলো না। তাহলে শোন সেই গল্পÑ
    রনিদের গ্রামের নাম শালচর। গ্রামের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের স্কুলের নাম করা হয়েছে।এটা অবশ্য সব জায়গায় করা হয়।মানুষও নামের অভাবে ভোগে! তাই একটা দিয়ে আরেকটার নাম রাখে! একবার রনিদের স্কুলের পক্ষ থেকে একটা বনভোজনের আয়োজন করা হলো। এতে ছাত্র-শিক্ষক প্রায় অনেকেই অংশগ্রহন করল। রনিও বাদ গেল না। সে ও যোগ দিল সবার সাথে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম যাবে পিকনিক করতে। এত দূরে যাবে শুনে অনেক বাবা-মাই তাদের সন্তানদের যেতে দিল না। রনির বাবাও বাধ সাধল। কিন্তু সে ছিল নাছোর বান্দা। তার এক কথা সে বনভোজনে যাবে যাবেই। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ও তাকে আর দমানো গেল না। তার বাবা আর কি করবে, শেষ পর্যন্ত তাকে যেতে দিতে বাধ্য হলেন।
    তাদের বাসটা চলতে লাগল চট্টগ্রামের প্রানে। সবকিছু আগে থেকেই গুছিয়ে নেয়া হয়েছে। পিকনিকটা বেশ আনন্দের হবে বলে মনে হলো। বাসের মধ্যে গানের আয়োজন করা হলো। একে একে সবাই গান গাইল। রনিও বাদ গেল না। টিচাররা অনেকে গিটার বাজিয়ে গান গাইলেন।
    রনির কাছে আজকের দিনটা অন্য দিনের চেয়ে খুব ভাল লাগছে। সে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করতে লাগল। মাঠ জুড়ে অবারিত হলুদ শর্ষেফুল তার চোখে ধাঁধাঁ ধরিয়ে দেয়। মনে হয় যেন, প্রকৃতি হলুদের চাদর বিছিয়ে রেখেছে। নদীর ধারে ফুটে আছে কত জানা আর কত অজানা ফুল। গাঙের সামান্য পানিতে সাদা বক কি যেন খুঁজে বেরোচ্ছে। মাঝে মাঝে রাস্তার দু’পাশে গাছ-পালার ঘন ঝোপ জঙ্গল চোখে পড়ছে। সবাই দৃশ্যগুলো বেশ আনন্দের সাথে দেখছে। তবে জানালার কাছে যারা বসেছে তাদের সুবিধা হলো বেশি। আর যারা তাদের পাশে বসেছে তাদের মন্দ ভাগ্যই বলতে হয়। কারণ তারা বাইরের প্রকৃতি কোন কিছুই ঠিক মত দেখতে পাচ্ছে না।
          রনির পাশে বসেছিল স্কুলের ‘মিছকি শয়তান’ নামে খ্যাত তন্ময়। তন্ময়ের মত এমন পাজি ছেলে আর একটাও খঁজে পাওয়া যাবে না তাদের স্কুলে। তবে ওর চালাকি খুব সহজে ধরা যায় না। রনিকেও সে খুব জ্বালাতে লাগল। এক সময় দ’ুজনের মধ্যে দ্বন্দ বেধে যায়। তন্ময় জানালার কাছে বসার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। কিন্তু রনি কিছুতেই দেবে না। এক পর্যায়ে দ’ুজনের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। মারামারির এক পর্যায়ে হঠাৎ তন্ময় গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে পড়ে যায়। বাসটা আস্তে চলছিল তাই সে বেশি ব্যথা পেল না। তবে ডান হাতটা সামান্য মস্কে গিয়েছে বলে মনে হলো। সাথে সাথে টিচাররা তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দেয়। তবে এর জন্য পুরো দোষ রনির উপর এসে পড়ে। যদিও সে এর জন্য মোটে ও দায়ী ছিল না। তাই তার আর তন্ময়ের জন্য আজকের পিকনিকটা প্রায় মাটি হয়ে গেল।
    প্রায় দেড়ঘন্টা পর তারা তাদের গন্তব্য স্থানে এসে পৌঁছে যায়। একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো রনি ভুলে যেতে চায় কিন্তু সে পারে না। টিচারদের রাগী রাগী মুখগুলো তার চোখে বার বার ভেসে উঠে। অন্যান্য ছেলেরা কি আনন্দনাই করছে কিন্তু রনি চুপ। রনি একা হেটে বেড়ায়। তাছাড়া তার সাথে কেউ কথাও বলছে না। মাঝে মাঝে দুই-একটা ছেলে তাকে টিট্কারি দিচ্ছে। ঐ দিকে সে ফিরেও তাকায় না। আজকের দিনটা রনি ভেবেছিল বেশ আনন্দে কাটবে কিন্তু তা আর হলো না। তন্ময়ের এক হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
    মোটামুটিভাবে তাদের পিকনিকটা শেষ হয়ে গেল। সন্ধ্যার আগেই তারা সবকিছু রেডি করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সকাল ছয়টা কি সাতটার দিকে তারা বাড়িতে এসে পৌঁছে যায়।
        হঠাৎ একটা ছেলে দেখতে পায় গাড়ির ছাদে একটা বানর বসে আছে।সে খবরটা সবাইকে জানিয়ে দেয়। তাদেও গ্রামে কোন বানর ছিল না,তাই তারা ভেবেই নিল এটা নিশ্চয় সেখান থেকে এসেছে যেখানে তারা পিকনিক করতে গিয়েছিল। এখন বানরটাকে কী করবে তাই নিয়ে সবার ভিতর প্রশ্ন দেখা দিল। কেউ কেউ বলল,বানরটাকে অন্য গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসতে,নইলে বানরের অত্যাচারে থাকা যাবে না। আবার কেউ কেউ বলল, বানরটাকে যেখান থেকে আনা হয়েছে সেখানে দিয়ে আসতে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিল, কে নিয়ে দিয়ে আসবে? বানরটা গাড়ির ছাদ থেকে নেমে রনির কাঁধে এসে বসে। রনি প্রথমে কিছুটা ভয় পায় কিন্তু পরে তার ভয় কেটে যায়। বানরটার গায়ে সে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দেয়। বানরটার জন্য তার মায়া হতে থাকে। তারপর সে বানরটাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ির কেউ প্রথমে বিষয়টা মেনে নেয়নি কিন্তু পরে অনেক জোরাজুরি করে তাদের রাজি করাতে হয়েছিল। তার জন্য অবশ্য রনিকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে। সে বানর পালে বলে তার সাথে অনেক বন্ধু সম্পর্ক নষ্ট করেছে। সে বানরটাকে বন্ধু করে নিয়েছে তাই তার অন্য বন্ধুর দরকার হয় না।


পাঁচ.    
  
      ররি দিন দিন বেশ বড় হয়ে উঠছে। সেই সাথে তার দুষ্টুমির পরিমাণটাও বাড়ছে। তাই গলায় শিকল দিয়ে বেধে রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তার ক্ষুধার পরিমাণটাও বাড়ছে। আগের থেকে এখন দ্বিগুন খাওয়া লাগে তার। আর সময় মত খাওয়া না পেলে এমন ভাব করে যেন, আহা! বেচারা কতই না হতভাগা। তার খাওয়ার সময় হলে কিচ্ কিচ্ ডাকতে থাকে। রনি কাছে থাকলে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রনির মতো বাড়ির অন্যরাও বানরটাকে কিছুটা আপন করে নিয়েছে। তাই রনি বাড়িতে না থাকলেও তারাই সাধারণত বানরটাকে খাইয়ে থাকে।
    ররির অভ্যাস ও দিন দিন বেশ খারাপ হয়ে উঠছে। সামনে যা কিছু পায় সব মুখে দিয়ে বসে। সাবান থেকে শুরু করে ছাই ও মাঝে মাঝে মুখে দিয়ে খেয়ে বসে।
    ররিকে আজ শিকল দিয়ে বাধা হয়নি। রনিরও কথাটা মনে ছিল না। আজ খোলা পেয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে বানরটা। রোদ পোহানোর জন্য গিয়ে বসল ঘরের টিনের চালটায়।
    ক্ষেতে ঔষধ দিয়ে রনির বাবা কীটনাশক ঔষধের বোতলটা রেখে দিল বাড়ির উঠানে। ররি ঘরের চালে বসে সে দৃশ্য দেখতে লাগল। যখন রনির বাবা উঠান থেকে চলে গেল ররি তখন চাল থেকে উঠোনে নেমে আসে। সে বোতলটা দেখে ভাবল, নিশ্চয় কোন খাওয়ার জিনিস হবে। তা সে আস্তে বোতলটার মুখ খুলে গপাগপ গিলতে থাকে। তার জানাও ছিল না যে, এটার ভিতর সত্যি কি ছিল! ররির মাথাটা কতক্ষণ ঝিমাতে লাগল। সে বুঝতে ও পারল না তার কি হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বানরটা ঢুলতে ঢুলতে মারা যায়। মাঝ উঠানেই ররি ঘুমিয়ে পড়ল অতল ঘুমে। ব্যাপারটা এখনো কারও চোখে পড়েনি।
    স্কুলে কেন জানি কিছুতেই রনির মন বসছে না। ররির কথাই বারবার মনে হচ্ছে। ররিকে দেখার জন্য রনি টিফিন টাইমেই বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসে রনির মনটা আর ও খারাপ হয়ে যায়। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন মরা বাড়ি। সে দাদা, বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করে সবাই এত মুখ গোমড়া করে আছে কেন। কিন্তু অবাক কান্ড তারা কেউই তার কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না! হঠাৎ রনির দৃষ্টিটা উঠানের দিকে যায়। আস্তে তার হাটা যেন বন্ধ হয়ে যায়। রনি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। রনি তার বুকে একটা ভীষন ব্যাথা অনুভব করল। সে বুঝতে পারল তার বুক ফেটে কান্না আসছে। সে কান্নাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। চোখ দিয়ে অশ্রুধারা আপনিই বয়ে যায়। তার বাবা তাকে স¦ান্তনা দেয়, কাঁদিস না, আমি তোকে আরো ভাল চেয়ে একটা বানর এনে দেব। কিন্তু এসব স¦ান্তনা রনির মনে কোন প্রভাব পেলতে পারে না। তবু ও সে বলে, ররিকে তো আর এনে দিতে পারবে না।
      তার চোখ দিয়ে পানি শুধুই পড়ছেই কোন বন্ধ নেই। গ্রামের অনেক লোক এসেছে বানরটাকে দেখতে। তা দেখে রনির রাগ আরো বেড়ে যায়। সে বলে, ররি মরেছে এখন সবাই তামাশা দেখতে এসেছে যাও সবাই এখান থেকে চলে যাও।
    ররি চলে যাওয়াতে সবার মাঝে কেমন জানি একটা শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তার দাদা, স্কুলের টিচাররা ররিকে পছন্দ না করলে ও ররির মৃত্যুতে সবার চোখেই যেন জল এসেছে। আগের মত ররিকে নিয়ে সবার মধ্যে হৈ চৈ কিছুই নেই। ররির কারণে পুরো বাড়িটা যেন নীরব নিস্তব্দ হয়ে গেছে। একটা তুচ্ছ প্রানী ও যে কতকিছু শূন্য করে দিতে পারে এটাই তার প্রমান!

ভূতো কবিগণ

     মানুষের মতো ভূতেদের মধ্যেও ইদানিং কবি প্রতিভার উন্মেষ গঠেছে। তারাও রচনা করছে বিখ্যাত সব ছড়া-কবিতা। আর দেদারমে চলছে তাদের সাহিত্য আসরগুলো। বাঁশাগা কিংবা বটের আগায় বসে সভা-সমাবেশ। হাজার হাজার কাব্যপ্রেমী ভূত সেখানে হাজির হয়। আর বইমেলাগুলো তো পাঠকের আগমনে জমজমাট। এত ভূত আসে যে চলাচলই দায় হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষ ভূতদের বইয়ের প্রতি অনুৎসায়িত করেও বইমেলায় তাদের আগমন কমাতে পারেনি। লেখকরাও অবশ্য এত বই পাগল ভূত পছন্দ করে না। তাদের অটোগ্রাফ দিতে সমস্যা হয়ে যায়। অনেক লেখক আবার অটোগ্রাফ বিক্রিও করে। এতে তাদের ভালই ইনকাম হয়।

         ভূতেদের মধ্যে কবিতা লিখে যারা বিখ্যাত হয়েছে তাদের মধ্যে ভূতোখুরি, কবি খেকচরি, কবি সুরসুরি, কবি ভুগচুরি, কবি গড়গড়ি, কবি মাথা পাগলসহ আরো অনেকে। খেকচরি বিখ্যাত হয়েছে তার ‘ভূতেশ্বরী’ নামক কাব্য- গ্রন্থের জন্য। ভূতোখুরি হলো গ্রামের কবি, অনেকটা কবি জসীম উদ্দীনের মতো। গ্রামে বাঁশগাছের সরু আগায় বসে সারাদিন শুধু কবিতা লেখে। ভূতেদের বিজ্ঞানী হরস্কোপের মত সেও মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়া ভুলে যায়। সে সবার কাছে “বাঁশগার কবি” নামে পরিচিত। নিজেকে নিয়ে একটা কবিতার জন্য সে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। দুই হাজার লাইন বিশিষ্ট এ কবিতার চারটি লাইন তোমাদের জন্য দেওয়া হলোঃ

                   “বাঁশ আগায় বসিয়া লিখিতেছি কাব্য
                    আমি কবি ভূতোখুরি, সৃজি কবিতায় নাব্য
                    আমার কবিতাগুলো বাঁশাগায় থাকবে না পড়ে
                    আমি হব বিখ্যাত অর হয়ে মরে।”

ভূতেদের কবিতা লেখার প্রধান সুবিধা হল তারা সাধু-চলিত ভাষা এক সাথে মিলালেও তাদের গুরুচন্ডালী দোষ হয় না। ভুতো পন্ডিতগন মনে করে যে যেভাবে ইচ্ছা লিখতেই পারে। সকলে বুঝতে পারে এমন জিনিসই তারা ব্যবহার কওে, নিয়ম টিয়মের ধার ধারে না। বর্তমানে ভূতো সমাজে কবিদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে কবি ভুগচুরি। সে বিখ্যাত হয়েছে তার উল্টা-পাল্টা লেখা নিয়ে প্রকাশিত ‘ভালবাসার ভূতক্ষণ’। এ গ্রন্থে সাহিত্যের কিছুনেই বলে অন্যান্য ভূতোকবিরা তাকে কবি উপাধি দিতে নারাজ। কিন্তু বর্তমান ভূত সমাজে তরুনদের উল্টা-পাল্টা জিনিস পছন্দ হওয়ায় তার বইটি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। তাই উপাধি সে এমনিতেই পেয়ে যায়।

ব্যাঙের ছাতার মতো ভূতো-সমাজে এখানে সেখানে গড়ে উঠেছে নানা পত্রিকার অফিস। তবে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দেশের একটি মাত্র প্রধান পত্রিকা রয়েছে। ভূতো-সমাজে এই পত্রিকার এতই কদর যে, পাঁচ হাজার কোটি সার্কুলেশন হয়েও অনেকে কিনার মত পত্রিকাই পায় না। পত্রিকার নাম হলো ‘ভূতোংলাপ’। সাপ্তাহিক এক লক্ষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত। দেশ-বিদেশ সবখানে এই পত্রিকার কদর আছে। বহু টাকায় রপ্তানী হয় এই পত্রিকা। বর্তমানে সরকারের আয়ের একটা বড় অংশ হলো এই পত্রিকা। এতে সব কবিরা পৃষ্ঠা দখলের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। একবার কবি খেকচরির লেখা এ পত্রিকায় প্রকাশিত না হওয়ায় চারদিকে তুল-কালাম কান্ড চলে। রাজনৈতিক নেতাদের মতো খেকচরির ভক্তরা পত্রিকা অফিস ঘেরাও গাছপালা ভাঙ্গা ও আগুন জ্বালানোসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। তাই এ পত্রিকার সম্পাদক পেলসককিকে সব সময় সাবধান থাকতে হয় যেন দুর্নীতিবাজ লেখদের লেখা যাতে বাদ না পড়ে। তাদের লেখা ছাপানো আবশ্যক, পরে ভাল লেখকদের লেখা-অবশ্য যদি পৃষ্ঠা বাকি থাকে।

সবচেয় বড় কবিতা লিখে যে বিখ্যাত হয়েছে তার নাম হলো কবি গড়গড়ি। সে পাঁচলক্ষ লাইনের একটা কবিতা লিখে সবার টপে আছে। তারপরে চারলক্ষ নিরানব্বই লাইন বিশিষ্ট একটা কবিতা লিখে দ্বিতীয়তে আছে ভূতোখুরি। কবি গড়গড়ি কবিতা লেখতে শুরু করলে আর যেন শেষ হতে চায় না। তার সবচে কম লাইনের কবিতাটাও দুই লক্ষ তিন লাইন বিশিষ্ট। তাছাড়া ভুতোকবি গড়গড়ি তার এত্তসব বড় বড় কবিতার জন্য অর্জন করেছে ভূতেদের সবচে সেরা পুরষ্কার “ভূতোষ্কার-১০০.৭”।

ভূতোকবিরা যে শান্তিতে ছিল তা কিন্তু নয়। তাদের মধ্যে চলত সব সময় প্রতিযোগিতা। কে কাকে কিভাবে পেছনে ফেলবে তা নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকত। এই যেমন কবি হতে হলে চুল বড় হওয়া চাই-ই-চাই। কিন্তু কার চুল কত বড় তাই ছিল দেখার বিষয়। ভূতেদের মধ্যে সবচে বড় চুল ছিল কবি মাথাপাগলের। কিন্তু তাকে পেছনে ফেলার জন্য খেকচরি মাথাপাগলের চুল থেকে আরো দুই হাত লম্বা আলগা চুল লাগায়।
কারো জনপ্রিয়তা যদি বেড়ে যেত তাহলে ভূতোকবিদের অনেকে কিছু ভূতকে টাকা খাইয়ে  আনত তাদের নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখানোর জন্য। এই ছিল ভূতোকবিদের মধ্যকার দ্বন্দ।

ভূতসমাজে বিভিন্ন এলাকায় কবি হওয়ার জন্যও আবার কোঠাপ্রথা চালু ছিল। যেমনটা আছে আমাদের সমাজে। দেশে কবির সংখ্যা কাকের মত বেড়ে যাওয়ায় ভূতো সরকারকে এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। তাই  বাদ পড়তে হয়েছে অনেক নবীন কবিকে [সাবধান, এ রচনা যেন কোনভাবেই ‘ভূতোসংলাপ’ পত্রিকার সম্পাদ পেলসককির হাতে না যায়। তাহলেই কম্ম সাবাড়। লিখতে হবে তার পত্রিকায়। আমার পক্ষে আবার দুই-তিন হাজার লাইনের কবিতা লেখা অসম্ভব। তাই পাঠকদের গোপনে পড়ার অনুমতিক্রমে লেখক।]



আরো গল্প পড়ুন

Sunday, September 11, 2011

দিগন্ত ছুঁয়েছে বর্ষার হাত

পানকৌড়ির ঠোঁট বেয়ে নেমে আসে
একফোটা জল,
স্নিগ্ধ চাহনির সাতকাহন মেলে
ছায়াকাব্য অবিরল।
শ্বেতরঙ্গনের ললাট ছুঁয়ে যায়
আদিমতার স্পর্শে
সন্ধ্যামণির পাপড়ি ঝরে,
চির নবীন এ বর্ষে!
ফুল হয়ে ফুটে যায়
সময়ের কালো পাতা;
বিরহীর ভেজা চোখে
স্পর্শহীন কাতরতা।
দিগন্তের কালো রেখা
নেমে আসে ভুলহীন
                 দৃষ্টিতে
বর্ষার হাত ছুয়ে ভিজে যাই
তুমি আমি     মহাকাব্যের
                  সৃষ্টিতে।
রংমহলে

পাজিদের খপ্পরে

চলতে ফিরতে টাকার প্রয়োজন যে কত তা মানুষ মাত্রই বুঝে। টাকা না থাকলে নিজের ভিতর ভিতর এমনিতেই ফকির ফকির একটা ভাব এসে যায়। বয়স তের হয়েছে তো কি হয়েছে, তাই বলে যে টাকার প্রয়োজন হবে না তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া ছোট্ট বাচ্চারা অন্য কিছু না চিনলেও সবার আগে টাকাটা ঠিকই চিনে। সুজনের পকেটটা বর্তমানে ফাঁকা তাই তার মাথায় ভাবনাগুলো খেলতে লাগল। তাছাড়া বাবা-মার পেছনে এক সপ্তাহ ঘুরে যাও দশ-বার টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে কি আর চলে! দোকানে একবার বসলেই তো পকেট গড়ের মাঠ। কিভাবে টাকা আয় করা যায় তাই নিয়ে সুজন বেশ ভাবতে লাগল। না, তার মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না। সে ভাবল, পদ্ম সাথে কথা বলা যাক, সে নিশ্চয়ই একটা আইডিয়া দিতে পারবে।
পদ্মকে বেশি দূর খুঁজতে হলো না, পুকুর ঘাটেই পাওয়া গেল। বরশি দিয়ে মাছ ধরছিল। সুজন নিশব্দে গিয়ে পদ্মের পাশে বসে পড়ল।
পদ্ম ওর দিকে না তাকিয়ে বলল, কিরে কোন সমস্যা মনে হচ্ছে।
সুজন কন্ঠে অভিমান নিয়ে বলল, সমস্যার কি আর শেষ আছেরে, ইদানিং বেশ টাকার সমস্যায় ভুগছিরে। বাবা মার কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে কি আর চলে। তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম যে বেড়েছে তা কি তাদের খেয়ালে আছে।
পদ্ম সুজনের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল, এ আর নতুন সমস্যা কি! এ সমস্যায় আমিও ভুগছি, তুইও ভুগছিস সব ছেলেরাই তো ভোগে।
সুজন এবার চান্স পেয়ে বলল, তাই তো বলছিলাম আমরা টাকা আয়ের নতুন কোন পথ খঁজে বের করি।
-ভিক্ষা ছাড়া কোন পথ নেই, বলেই পদ্ম হাসতে লাগল। রাস্তার মোড়ে থালা হাতে ভিক্ষা করতে পারবি তো।
-ধুৎ এসব যে কি বলিস। না বলছিলাম কি, কোন কিছুর ব্যবসা-ট্যবসা করা যায় না।
-এ বয়সে ব্যবসায়ী (!?) আমাদের প্রেস্টিজ বলে কথা আছে না! তাছাড়া সবার কাছে আমাদের পাত্তা থাকবে বলে মনে করিস? সবাই যখন ‘আম ব্যাপারী’ নয় ‘জাম ব্যাপারী’ কিংবা ‘কচু ব্যাপারী’ বলবে তখন কেমন লাগবে?
সুজন এবার কোন কথা বলল না, চুপ করে ভাবতে লাগল। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল।
-ইউরেকা ! দারুন একটা আইডিয়া পেয়েছিরে পদ্ম। পুঁজি ছাড়া জমজমাট ব্যবসা। কিছু দিনের ভিতর মনে র্ক হাজার পতি।
পদ্ম এবার অবাক না হয়ে পাড়ল না। তবু সে ব্যাপারটাকে একটু তাচ্ছিল্য করে বলল, ওসব চুরির চিন্তা বাদ দে। শেষে চুরিতে ধরা খেলে শরীলের হাড্ডি গুড়ো করে বাচ্চাদের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ গুরুদুধ তৈরি করবে।
-আরে গাঁধা ও সব কিছু না। আমাদের গণক সাজতে হবে। মানুষের হাত দেখে টাকা আয় বুঝলি। জমজমাট ব্যবসা হবে। দিনে একশ হলে ও চলে নাকি!
সুজনের আইডিয়াটা পদ্মের বেশ পছন্দ হল। সে ভাবল, কিছু টাকা যদি আয় করা যায় তাহলে অন্তত কিছুদিন এলাকায় বেশ ভাব দেখিয়ে চলা যাবে। তাছাড়া শান্তাকে একটা উপহারও দেওয়া যাবে। অনেক দিন সে দেবে দেবে ভাবছিল কিন্তু টাকায় আর হয়ে ওঠে না। অথচ তুরাবটা ওকে উপহার দিতে দিতে ওর মন পাওয়ার অবস্থা হয়ে গিয়েছে।
পদ্ম আর সুজন ব্যবসার কাজ পুরোদমে শুরু করে দিল। এ কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের সাগরেদ হিসেবে নেয়া হল কেরামতকে। সেদিন ভূত হিসেবে ধরা খেয়ে দু‘জনের হাতে যা মার খেয়েছে তাতে সে সব শত্রুতামি ভুলে গিয়েছে। শেষে পদ্মদের দলে যোগ দিয়েছে। এজন্য অবশ্য তাকে রক্তকসম কাটতে হয়েছে। আর রক্ত কসম মানে তো বুঝই!
জ্যোতিষী হওয়ার কাজটা ওরা যত সহজ ভেবেছিল আসলে তত সহজ নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের যে কত ফের আছে তা কি ওদের ছোট্ট মাথায় ধরে। হাতের কোন রেখার কি নাম তা মনে রাখা বায়োলজির বৈজ্ঞানিক নাম মনে রাখার ছেয়ে আরো কঠিন। জ্যোতিষী হওয়ার জন্য ওরা এক ঘাট্টা বইও কিনে এনেছিল। এখন এসব পড়ে দু’জনের মাথা হেট হচ্ছে! তাই ওরা ভাবল, কোন গুরুর কাছে গিয়ে শিক্ষা নেবে কিন্তু দেখা গেল সেই বেটা ওদের থেকে আরো ফাঁকিবাজ। ওরা তো বই দেখে কিছু শিখেছে কিন্তু সেই বটোতো তাও জানে না। তবে ঐ লোকের ফাঁকিবাজির টেকনিকগুলো শিখে নিল।
কিছুদিনের ভিতর ওরা ওদের জিনিসপত্র নিয়ে ভাল একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসে পড়ল। দু’জনের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে ফেলল। লম্বা কালো আলখাল্লা, মুখে সাদা দাড়ি, মাথায় বিশাল বড় এক পাগড়ি। সামনে স্বচ্ছ কাছের হাড়ি, ওদের এমন একটা ভাব যেন এই কাচের হাড়িতে ওরা মানুষের ভূত-পূর্ব-ভবিষ্যত সবই দেখতে পায়। কেরামত পাক্কা সাগরেদের মত কাজ চালাতে লাগল। আর একটা ব্যানারের ভিতর “এখানে মানুষের অচিন্তনীয় বিষয় চিন্তা করা হয় এবং ভাগ্য পরিবর্তন করা হয় -অকার্য সাধনে শ্রী গুরুজি হানাফাত আলী সিনা পদন এবং শ্রী গুরুজি মারাকত আলী সুজনপুরী ” লিখে সামনে ঝুলিয়ে দিল। ছদ্ম নামের সাথে ওদের নাম সামান্য পরিবর্তন করে জুড়িয়ে দিল, যাতে কেউ এসে বললে সহজে ধরে ফেলতে পারে।
নতুন ব্যবসায় ওদের সাফল্য বেশ ভাল ভাবেই আসতে লাগল। ভাগ্য পরিবর্তনের নেশায় সবাই হুমরি খেয়ে পড়ল। এলাকার যত ভাবুক ছেলে ছিল সবগুলো অচিন্তনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে এল। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেল বিদেশ থেকে আগত দুই গুরু অকল্পনীয়ভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করিয়ে দিতে পারে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতে লাগল তাদের কাছে। প্রথম দিকে তারা ‘বিজিট ফি’ পাঁচ টাকা নিলেও, পরে এত সাড়া পেয়ে ‘বিজিট ফি’ বাড়িয়ে দিল। তারপর ও লোকের কমতি নেই।
স্কুল টাইমে এরা শুধু বেশ-ভূসা পাল্টে ক্লাস করে আসে। তারপর আবার আগের বেশে কাজে নামে। ক্লাসের ছেলেরা ওদের সামনেই দুই গুরুজির কীর্তন গায়। ওরা শুধু মনে মনে হাসে আর বলে,“তোরা কি আর বুঝবি ঐ গুরুজি কে?”
প্রতিদিন ওদের কাছে মানুষ অদ্ভুত সব সমস্যা নিয়ে আসে। সেদিন এক লোক আসল, তার মোরগের ভবিষ্যৎ বলে দিতে। ওরা কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল, আপনার মোরগ ভবিষ্যতে ডিম দেবে, সকাল বেলা আরো জোরে জোরে ডেকে সবার ঘুম হারাম করবে। এ কথা শুনে লোকটাতো আনন্দে উৎফুল্ল। এমন সময় সুজনের বোধোদয় হল। সে ভাবল, আরে মোরগ আবার ডিম দিতে পারে নাকি!
তাই সে কথা কাটানোর জন্য বলল, আপনার মোরগ আজকে রাতেই শুধু ডিম পাড়বে। এবং আজকেই শেষ।
কথা বললেই তো হবে না, প্রমাণ তো করতে হবে। তাই রাতের বেলা চুপি চুপি গিয়ে ওরা মোরগের নিচে এককুড়ি ডিম দিয়ে আসল। পরদিন সকাল বেলা এ ব্যাপার নিয়ে পুরো গ্রামজুড়ে হইচই পড়ে গেল। গুরুর আশির্বাদে মোরগে ডিম পেড়েছে এই রবে পুরো এলাকা তোলপাড়। এর ফলে ওদের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বেড়ে গেল। আগের থেকে লোকসমাগমও বেড়ে গেল প্রচুর পরিমাণে। গণকের সাথে দরবেশ উপাধিটাও জুড়ে গেল।
ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ওদের কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হতো। ওরা প্রথমে হাত দেখে যে কোন একটা সমস্যার কথা বলত। আর এটা শুনে তো ঐ লোকের যখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, তখন পদ্ম গম্ভীর হয়ে বলত, চিন্তা করে লাভ নেই বৎস, এই সাদা হাড়ির ভিতর মাথা ঢুকিয়ে এক ঘন্টা বসে থাক তাহলে সব সমস্যা কেটে যাবে। পরে যখন দেখত এই হাড়ির ভিতর মাথা ঢুকিয়ে রাখার জন্য সেই সমস্যা আর হতো না তখন তো লোকে ওদের প্রসংশায় আত্মহারা হতো।
এমনিভাবে একদিন এক ডাকাত সর্দার এলো ওদের কাছে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। ডাকাতিতে কিছুতেই সাফল্য পাচ্ছে না বেচারা। পরবর্তী মিশন যাতে আর ব্যর্থ হতে না হয় তাই ওদের কাছে আসা।
সুজনের হাতে দুইটা পাঁচশ টাকার নোট গজিয়ে ডাকাত সর্দার তার পা টিপতে টিপতে বলল, “বাবা মোগো লাই কিছু কর, দুই দুইডা ডাকাতি থাইকা খালি হাতে ফিরা আইছি এইবার কিছু কইরতে না র্পালি ডাকাতির ইজ্জত যাইব।”
এ কথা শুনে সুজনের মুখটা উজ্জ¦ল হয়ে উঠল। অনেক দিন থেকে তারা গোয়েন্দাগিরির পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু কোন কেচ-ই হাতে আসছে না। স্বয়ং ডাকাতকে কাছে পেয়ে ওরা ব্যাপারটা লুফে নিতে চাইল।
তাই পদ্ম জিজ্ঞাসা করল,“পরবর্তী মিশন কোথায় আছে?”
“গোপন ব্যাপারগো বলতি নাই!”
“না বললে তো এবার ও ব্যর্থ।”
“হায় হায় একি কতা কইলে গো বাবা। দয়া করহ্ দয়া করহ্। গোপন
ব্যাপার হলিও তোমাগো তো বলতি মানা নাই। তোমগো তো সর্বোদৃষ্টি।
হাসু মেম্বরের বাইত। আলমারি ভত্তি টাহা আছে,হুনছি।”
“ঠিক আছে ঠিক আছে। সে আমার আগেই জানা আছে। শুক্রবারে শুধু
লাঠি হাতে ডাকাতিতে যাবি তাহলে আর কেউ ঠেকাতে পারব না। মনে
রাখবি লাঠি হাতে শুক্রবার রাতে অন্য কোন দিন না।”
তারপর ডাকাত সর্দার ওদের পা চুম্বন করে খুশি মনে বিদায় নিল।
ডাকাত দলকে কিভাবে ধরলে ওদের ক্রেডিট বাড়বে তাই নিয়ে ভাবতে লাগল ওরা। সুজন মরামর্শ দিল, “আয় পুলিশকে আগে সব জানিয়ে রাখি তাহলে মনে কর দলটাকে ধরা সোজা হবে।”
পদ্ম ওর কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,“তোর মাথায় ব্রেন বলতে কিছু নেই। বোকা কোথাকার, পুলিশই যদি ধরে ফেলল তাহলে তো পুরো ক্রেডিট যাবে পুলিশের হাতে। তাছাড়া আমাদেরও বিপদের সম্ভাবনা আছে।
“আমাদের আর বিপদ কি”?
“আমাদের বিপদ কি মানে! পুলিশ যদি জিজ্ঞাসা করে আমরা কোথা থেকে এ তথ্য পেয়েছি, কি বলবি তখন? শেষে দেখা যাবে ডাকাত হিসেবে আমাদেরই লক-আপে ডুকিয়ে দেবে। সুতরাং আমাদেরকেই মাঠে নামতে হবে। পুরো ডাকাত দলকে পরাস্ত করে তবেই পুলিশ। বুঝলি?”
“ডাকাত দলকে আমরা পরাস্ত করব? ফাজলামো করিস না। যা কিছু করার চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে।”
“চিন্তা ভাবনা করেই বলছি।”
“নাউযুবিল্লাহ, আমরা দু‘জন ডাকাত দলের সাথে পারব কি করে।”
“সেটাই তো গোয়েন্দাদের ক্রেডিট। আমরা দু‘জন কে বলল কেরামত আছে না। তাছাড়া মেম্বার সাহেবের ¯েœহধন্য হওয়ার এটা একটা বড় সুুযোগ।”
“পদ্ম আমি তো চোখে কোন পথই দেখছি না। শেষে না ডাকাতের হাতে প্রাণটা যায়।”
পদ্ম মৃদু হেসে বলল,আগে শুক্রবার আসুক তারপর দেখবি। শুক্রবার দিন সকাল বেলা কেরামত এসে খবর দিল, সে দু‘জন লোককে দেখেছে হাশু মেম্বারের বাড়িতে নজর রাখতে। পদ্ম শুনে বলল, “এ আর নতুন কী, ডাকাতদের সিস্টেমই এটা। ডাকাতি করার আগে বাড়ির হাল অবস্থা জেনে যায়। তবে ডাকাতিতে কয় জন আসবে তা জানতে পারলে ভাল হত?”
কেরামত মাথা চুলকে বলল, “কয়জন আর হবে? সত্তর কি আশি।”
পদ্ম ঠাট্টা করে বলল, “তোর বিয়ের দাওয়াত খেতে আসবে তো,তাই পুরো এলাকাবাসী নিয়ে আসবে। গাধা এই কমন সেন্সটাও নেই। দশজনের বেশি তো আসবেই না।”
এবার সুজন কিছুটা অভিমান দেখিয়ে বলল, “ঐ দশজনকে পরাস্ত করবি কিভাবে সেটাই আগে ভাব।”
“সেটা আমার ভাবা হয়ে গেছে। তুই শুধু তোর ছোট ভাইয়ের খেলনার পিস্তলটা নিয়ে আসবি। আর আমাদেও টিমে আর একজন লাগবে।”
“তুই কি পাগল হয়েছিস্ খেলনার পিস্তল দিয়ে ডাকাত দলের মোকাবেলা! তোর আসলে প্রাণের মায়া নেই। আরেক জন না লাগবে বললি, ইচ্ছে করলে কেরামতের দুধ খাওয়া ভাইটাকে নিতে পারিস।
পদ্ম ভাবল, এই দু‘জনকে পুরো পরিকল্পনা বুঝিয়ে না বললে কোন কাজই হবে না। তাই সে পুরো পরিকল্পনাটা বিস্তারিতভাবে ওদেও শুনিয়ে দিল। সব শুনে ওদের কাছে পুরো ব্যাপারটা পানির মত সোজা মনে হলো। সুজন পদ্মের বুদ্ধির প্রসংশা না করে পারল না।ওদের সঙ্গী হিসেবে আরেক জনকে খুব সহজে পাওয়া গেল, ওদের ক্লাসেরই শমসের। সব কাজে ওদের খুব সহযোগিতা করে।
শুক্রবার রাতে ওরা উপস্থিত হয়ে গেল হাসু মেম্বারের বাড়িতে। কি করতে হবে পদ্মদের খুব ভাল করেই জানা আছে, তারা শুধু ডাকাত দলের অপেক্ষা আছে। রাত বারটা পঁচিশে ডাকাত দল এসে হাজির হল হাশু মেম্বারের বাড়িতে। ওরা মোট পাঁচজন।দু‘জন বাইরে পাহারায় আর তিন জন বাড়ির ভেতরে গেছে ডাকাতি করতে।
পদ্মদের পুরো টিমটাও রেডি। ডাকাতদের সব কর্মকান্ড ওরা আম গাছের ডগায় বসেদেখছে। মূল মিশনে যাবে পদ্ম, সুজন আর কেরামত। সমশেরের কাজ হলো ওদের কিছু হলে পুরো গ্রাম ডেকে জাগিয়ে তোলা। সুজন বলল,আয় আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দ্্িই।পদ্ম ওকে থামিয়ে বলল, ‘উহ হো’ এখন কিছুই করা যাবে না, ডাকাতরা মূল মিশনে যাবে আর আমরা শুরু করব। তবে এতক্ষণে মনে হল ডাকাতরা বাড়িতে আক্রমন করে লুটপাট শুরু করেছে কারণ বাড়ির ভেতর থেকে হই চই শোনা যাচ্ছে।
ওরা এবার কাজে নেমে পড়ল । প্রথমেই দুই পাহারাদারকে শায়েস্তা করতে হবে। পদ্ম আর কেরামত দুই দিক থেকে এগিয়ে গেল দুটো বরাগ বাঁশের লাঠি নিয়ে। গাব গাছের পিছনে লুকিয়ে ওরা সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল। কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই দেখে ডাকাত দুটো আলাপচারিতায় মগ্ন হলো। পদ্ম কেরামতকে ইশারা দিল এটাই সবচে ভাল সুযোগ। দু‘জন একসাথে দুই ডাকাতের মাথার পিছনে মড়াৎ করে দিল বাড়ি। ‘কোৎ’ করে দুই ডাকাত এক সাথে অজ্ঞান। সুজন দেরি না করে দুটো ডাকাতকে শক্ত করে বেঁধে ফেলল।
বাড়ির ভেতর সবার মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও,ডাকাত সর্দারের লাঠির সামনে দাঁড়ানোর সাহস কারও নেই। পদ্ম,সুজন আর কেরামত চুপি চুপি এগিয়ে গেল। পদ্ম বলল, সবার পিস্তলগুলো হাতে বের করে রাখ। ভুলে ও ভাববি না এগুলো খেলনার পিস্তল।
ডাকাতরা খুব চালাক, বিদ্যুৎ সংযোগ আগেই নষ্ট করেছে। ওদের হাতে টর্চ আছে। অন্ধকার হওয়ার পদ্মদের জন্যও সুবিধা হলো।
তিনজনেই খুব সাবধানে কাজ করছে। ডাকাতদের মুখোমুখি হলেই ঝামেলা। ওরা ঘরের ভিতর উকি দিল। সবাইকে বেধে রেখেছে মনে হলো। ডাকাতগুলো জিনিসপত্র লুট করে বস্তার ভিতর ডুকাচ্ছে। ওরা তিনজন দেয়াল ঘেঁষে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে লাগল। সুজনটা শেষ পর্যন্ত বিপত্তি লাগাল। হাঁসের খোঁয়াড়ের খুটিতে ধাক্কা খেয়ে দরাম করে পড়ল মাটিতে। ডাকাত দল সাবধান হয়ে গেল। টর্চ টিপে ধরে রাখল তার দিকে। দু‘জন লাঠি তোলে এগিয়ে আসল ওকে মারার জন্য। ডাকাত দুটোর হিং¯্র চেহারা দেখে সুজনের আত্মরাম খাচাছাড়া।
এ অবস্থায় পদ্ম আর কেরামত করল আসল কাজ। দু‘জন দুই ডাকাতের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গলা একটু মোটা করে বলল, একটু নড়বি তো শালা মাথার খুলি উড়িয়ে দেব। আমরা পুলিশের লোক। তোদের ডাকাতির খবর আগেই পেয়েছি। ওর কথায় মনে হয় কাজ হল। কারন দুই ডাকাত একদম স্থির হয়ে গেছে। কিন্তু আরেকটা কই? ঐ ডাকাতের আসলে আজ অভিষেক ছিল। দুই ডাকাত ধরা পড়ায় বেচারা এত পরিমানে ভয় পেয়েছে যে ভো দৌড় দিয়েছে, যাওয়ার সময় লুঙ্গিটাও ফেলে গেছে।
সুজন বাড়ির সবার বাধন খুলে দিল। সাথে সাথে দুই ডাকাতকেও বেধে ফেলা হলো। হাশু মেম্বারের কাজের ছেলে ছাত্তার গিয়ে পুলিশেকে খবর দিল। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেল ডাকাত দলকে। থানার ওসি সাহেব ওদের সাহসিকতার খুব প্রসংশা করল। আর হাশু মেম্বারের তো কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। পারলে ওদের নিজের ছেলে করে রেখে দেয়।
ওদের এ সাহসিকতার সুনাম পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল। স্কুল থেকেও ওদের সাহসী ছেলে বলে সংবর্ধনা দেয়া হলো। পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হলো ওদের কৃতিত্ব।
পদ্ম আর সুজন ভাবল এত সুনাম থাকতে আর ঐ গণকবাজি করে কাজ কি ! তাই তারা ঐ ফাঁকিবাজি কাজটা ছেড়ে দিল। কিন্তু মানুষ কি আর মানে, দুই বাবার শোকে সবাই একেবারে শোকাহত হয়ে গেল। বাবা গো কোথায় গেলে,বলে এ বাড়ি ও বাড়িতে শোকের আওয়াজ শোনা যায়। পদ্ম, সুজন কি করবে তাই ভাবছে!আমার লেখা পড়ুন।

Saturday, August 27, 2011

গাছে চড়া

হাতির ভীষণ ইচ্ছে হলো উঠবে চড়ে গেছে
সেই আশাতে মত্ত হয়ে আনন্দে সে নাচে,
ঐ দেখ না বানরগুলো
খাচ্ছে বসে সাদা মুলো।
হাতি বেটার বুক ফেটে যায় ওদের প্রতি ইর্ষে
এইবার সে ভাঙবে রেকর্ড উঠে গাছের শীর্ষে
এমন আজব কথা শুনে
পাখি ছড়ায় জন-কুজনে
শিয়াল বাঘ চামচিকারা উঠতে বলে গাছে
উঠলে পড়ে বুঝবে মজা কেমন বিপদ আছে!
কারো কথায় কান না দিয়ে
উঠলো হাতি গাছে,
গাছে উঠেই আনন্দে সে
তা ধিন তা নাচে।
ভাঙলো ডাল ফট ফটাফট;
এরপরে যা ঘটলো তা কী তোমরা জানোরে?
হাতির কাজ হাতির মানায় বানরেরটা বানরে।

নালিশ

যা করেছি ,সব ভুলে যা
করিস না তুই নালিশ
জানতে পারলে আম্মু আমায়
মেরে করবে পালিশ!!
চুরি করেছি দু‘জন মিলে
তোরটা না হয় নিল চিলে
তাই বলে তুই করবি নাকি রাগ?
না হয় তোকে
আমার থেকে আমার থেকে দিলাম কিছু ভাগ।
কালকে আবার করব চুরি
রমিজ মিয়ার গাছে
সেথায় নাকি টুকটুকে লাল
পেয়ারা পেকে আছে!
সত্যি বলছি,তোকে দেবো
সেসব ফলের ভাগ
দু‘জন মিলে করবো চুরি
করিস না আর রাগ।

Saturday, July 9, 2011

দূর হতে আরো দূরে

যাও ভুলে যাও
আজ পিছু ডাকবো না,
যাও চলে যাও
দূর হতে আরো দূরে
সব স্মৃতি মুছে দিয়ে
গহীনের অন্ধক্ষণে।
হৃদয়ের যত
অনুভূতি ছিল
হয়ে গেছে পাথরের
মরা কান্না।
শুকনো পাতার মতো
রৃষ্টিতে ভেসে গেছি
তবু ফিরে চাইলে না।
অশ্রুর ভেজা জল
তোমার কাছে
শুধুই বৃষ্টির ফোঁটা,
শালিকের অবুঝ ডাক
শুধুই মিছে কোলাহল।

নিশীথের অন্ধকারে
ম্লান হয়ে আসে
ভুলে ভরা ইতিহাস।

শ্রাবণের মিথ্যে রাতের গল্পে
নিশাচররা স্বপ্নহীন,
তোমার মাঝে আজও
মিথ্যেরা রঙীন।

কষ্টের মাঝে লীন হয়
প্রাণহীন জীবিত মানুষ,
যাও চলে যাও
শুধু ফিরে চেও না,

অবাক হয়ে
নির্লীপ্ত আমি।

Tuesday, June 14, 2011

ত্রি.এন.এ.

প্রতিদিন ইন্টারনেট ঘেটে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের খোঁজ করাটা আমার কাছে নেশার মতো দাড়িঁয়েছে।আজ একটা নিউজ দেখলাম প্রতিটি ব্লগে স্থান করে নিয়েছে।খবরটা খুব আশ্চর্যজনক।পুরো ব্যাপারটা বিজ্ঞানের দৃষ্টি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।
'Science Vision'-এর Web Page এ গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারলাম।চিলির দক্ষিণে আনুকাঠ চিলোইদ্বীপে আশ্চর্য এক ফসিল পাওয়া গেছে।ফসিলের বয়স খুব বেশি নয়।আশ্চর্যের কারণ হল ফসিলের কোষ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এর প্রতিটি কোষে তিনটি নিউক্লিয়াস রয়েছে।যা কিনা পৃথিবীর প্রোক্যারিওটিক কিংবা ইউক্যারিওটিক কোন জীবেই দেখা যায় না।তাই বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন ত্রি.এ.এ.(তিন নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট প্রাণী)।সবচে' অদ্ভূত ব্যাপার হলো,প্রাণীটার আকৃতি সম্পূর্ণ মানুষের মতো।কয়েকজন আর্টিস্টের আকা কাল্পনিক কিছু ছবিও দেখতে পেলাম।

নতুন আবিষ্কৃত ফসিলটা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই।একের পর এক মত আসছে এ নিয়ে।বর্তমানকালের সেরা বিজ্ঞানী রুশ নাগরিক বার্নার্ড ইভানোভস্কির একটা আর্টিকেল পড়ে শিহরিত হলাম।তিনি লিখেছেন, পৃথিবীর পাচশ কোটি বছরের ইতিহাসে বিবর্তনবাদ কিংবা প্রাকৃতিক জীন প্রকৌশলের ফলে এই ত্রি.এন.এ. প্রানীদের আগমন।কল্পনীয় হলেও ব্যাপারটা সত্য যে,এই তিন নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট প্রানীটা এখনো মানুষের ভিতর টিকে আছে ,দিব্যি মানুষের দলবুক্ত হয়ে।এই প্রানীগুলো এখনো যে টিকে আছে তা অনেক বিজ্ঞানীর কথাতে জানতে পারলাম।চিলির বিভিন্ন প্রদেশে খোঁজাখুজির কাজও শুরু হয়ে আছে।
০০০ ০০০ 000 0000
আমাদের কলেজে সব মেধাবী ছাত্ররা ভর্তি হলেও আচার আচরণে সম্পূর্ণ ভিন্ন এ রকম ছেলে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল।আমাদের ক্লাসের তেমনি এক ছেলে রুশো।সবসময় খুব চুপচাপ থাকে আবার কথা বললেও অনেকটা যান্ত্রিক মনে হয়।তাছাড়া ওর গায়ের রংও আমাদের থেকে আলাদা।তামাটে শরীর হলদে ছাচ। প্রথম দিকে আমরা ওর সাথে না মিশলেও পরবর্তীতে আষ্তে আস্তে বন্ধুত্ব করে ফেলি।

রুশো আমাদের ভিতর জনপ্রিয় ছিল তার কিছু অদ্ভুত গুণের কারণে । মানুষের মনের কথা ও খটাস করে বলে দিতে পারত । তাই আমরা ওর সাথে কথা বলার সময় মুখের চেয়ে মনের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতাম বেশি । লিপ রিডিং-এ ওর তুলনা ছিল না। দূর থেকে ও ঠোঁট নড়াচড়া দেখেও বলে দিতে পারত কি কথা বলছে।

মেধার দিক দিয়েও যে রুশো কম ছিল তা কিন্তু নয়। একবার দেখলেই সবকিছু মনে রাখতে পারত । পড়ালেখায় ওকে কখনো আটকাতে দেখিনি।

আমাদের Zoology টিচার গাজী আকমল যিন ছিলেন খুব বুদ্ধিমান একজন টিচার। উনি মিনহাজকে প্রথম থেকেই কেমন জানি সন্দেহ করতেন। ত্রি.এন.এ. এর খবরটা প্রকাশ হওয়ার পর তার ধারণা আরো দৃঢ় হয়।

স্যার একদিন পড়া ধরার নাম করে রুশোকে ডেস্কে ডেকে নিলেন। তারপর বুদ্ধি করে রুমালের ভিতর ও কোষের কিছু অস্তিত্ব রেখে দিলেন। স্যারের পরিচিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্টোলজি বিভাগের একজন টিচারের কাছে দিলেন সেই কোষ পরীক্ষা করার জন্য।

কিছুদিন পর অবাক করা এক তথ্য পাওয়া গেল, যা স্যার নিজেও বিশ্বাস করতে পারলেন না। ওর D.N.A.Structure মানুষের মত নয়। এমনকি অন্য কোন জীবিত প্রাণীর সাথেও মিলছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা উঠে পড়ে লাগলেন এই কোষ কার জানার জন্য। কিন্তু স্যার কিছুই প্রকাশ করলেন না।
আজমল স্যারের এক সময় সখ ছিল বিজ্ঞানী হবার,কিন্তু নানা প্রিতকুলতার দরুণ তা আর হয়ে উঠেনি। স্যার ভাবলেন, বিজ্ঞানীদের কাতারে নাম লেখাবার এটাই একটা মোক্ষম সুযোগ। ত্রি.এন.এ. নিয়ে তিনি নিজেই গবেষণা করবেন বলে ঠিক করলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। স্যার দ্বিগুণ উৎসাহে গবেষণা শুরু করলেন।

স্যারের গবেষণায় নতুন নতুন সব তথ্য বের হতে লাগল। স্যার একদিন চুপিচুপি রুশোদের বাড়িতে গেলেন। ওদের বাড়িটাও দেখতে অনেকটা অদ্ভুত। পৃথিবীর কোন বাড়ির সাথে মিল নেই। অ্যালুমিনিয়ামের পাতের তৈরি খোপের মতো বাড়ি। স্যার অনেক চেষ্টা করে জানতে পারলেন, রুশোর কোন মা নেই। আর কখনো ছিল কিনা জানা গেল না। এ তথ্যটা স্যারকে খুব ভাবিয়ে তুলল।

গবেষণার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে, তেমনি স্যারকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু কাজ করতে হলো। মিনহাজকে তিনি তার রুমে ডেকে পাঠালেন।শরীর চেকআপ করে ওর অবস্থা দেখে পুরো হতভম্ব হয়ে গেলেন। এই ত্রি.এন.এ. প্রাণীগুলো উভলিঙ্গ ! অর্থাৎ রুশোর মত একটা প্রাণী সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুক্রানু আর ডিম্বানু একই শরীরে উৎপন্ন হয়।আকমল স্যারের এ আবিষ্কার বিজ্ঞানকে কী এগিয়ে দিল নাকি পিছিয়ে দিল তা ভাববার বিষয়।

স্যার গবেষণার কাজ মোটামুটি গুছিয়ে নিলেন।তবে তিনি নতুন একটা ভাবনায় পড়লেন,এই ত্রি.এন.এ. প্রাণীদের মানুষের গোত্রে ফেলবেন নাকি অন্য কোন নতুন গোত্র!!আচার ব্যবহার গঠন মানুষের মতো হলেও কোষের গঠন তো আর এক না!তাছাড়া D.N.A. Structure ও তো এক না!স্যার ভাবলেন অত আজগুবি চিন্তা করে লাভ নেই, গবেষনার ফলাফল আগে প্রকাশ হোক তারপর নতুন আরো অনেক কিছু বের হবে।

ইন্টারনেটে প্রকাশ হলো আকমল স্যারের গবেষনার ফল।স্যারের এই আশ্চর্য প্রতিবেদনটা আমাদের সবাইকে অবাক করল,কারণ আমরা এর কিছুই জানতাম না।তাছাড়া সারা পৃথিবী তোলপাড় করলো এই একটা প্রতিবেদন!আর এই প্রতিবেদনের জন্য আজমল স্যার বনে গেলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট বিজ্ঞানীদের একজন।

নানা দেশের বিজ্ঞানীরা রুশোকে পাওয়ার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হল।অনেক চিড়িয়াখানাও এ ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাল।ঢাকা চিড়িয়াখানা দাবি করল এই প্রাণীটা যেহেতু বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে তাই এটা এই চিড়িয়াখানাতেই স্থান পাওয়া উচিত ।

এদিকে স্যারের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থেকে রুশোও উধাও । কোথায় গেছে কেউ তার কোন হদিশ দিতে পারল না! আমরা স্যারের সাথে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু বাড়িশুদ্ধ উধাও।

ও উধাও হয়েছে দেখে আমরা অন্তত শান্তি পেলাম। কারণ ওকে পেলে হয়তো এ যুগের মানুষ গবেষনাগারের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করতো।
রুশোর উধাও হওয়ার গঠনায় স্যারের মুখে শুধু হাসি দেখলাম,কিন্তু তার মানে বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।ত্রি.এন.এ.-কে না পাওয়ার দুঃখ হয়তো পৃথিবীর থেকে যাবে কিন্তু আমাদের থাকবে না। আমাদের কামনা যেখানেই থাকো ত্রি.এন.এ. রুশো ভাল থেকো,আর আমাদের মনে রেখো......।

Friday, June 3, 2011

একটি কবিতা

ও কবি,উদাসী কবি
হোমারের উত্তরসূরী
তোমার একটি কবিতা
শুধু একটি কবিতা
আমার অস্তিত্বহীন সত্তায়
লিখে দাও
শুধু একটি কবিতা।

কালের ধূসর পটে
ইতিহাসের মলিন খাতায়
চিরায়ত সত্তায়
টিকে থাকবে
একটি কবিতা।

ঝিঝির ডাকে যে নিদারুণ ব্যথা
চৈত্রের শুকনো শরীর,
কবি, তুমি ছাড়া বুঝবে কে?
সোনালুর হলুদ ফুলে
শিশিরের ব্যর্থতা
আর আমার মিটে যাওয়া ভালবাসা
সবাই তো তোমার ভবিষ্যৎ বানী।

শ্রাবণের নির্ঝর রাতে
হিমেল হাওয়ার মিষ্টি ঘ্রাণে
তুমি কবি একা জেগে
হাতে একটি কবিতা
শুধু একটি কবিতা।

Wednesday, May 25, 2011

এ বৃষ্টি ছুঁয়ে যাক তোমার হৃদয়

এই বৃষ্টির শব্দ
তুমি শুনতে কি পাও?
পাংশু মেঘের ক্রন্দন
লক্ষ বছর ধরে
মুছে দিয়ে যাচ্ছে
বিরহের কালো জল।

পৃথিবী দেখেছে ক্লিওপেট্রার
বৃষ্টিস্নাত দেহ
আর আজও মনে রেখেছে।
ইতিহাসের কত রূপসী রমনী
বৃষ্টিকে দেখিয়েছে
রূপ আর যৌবনের অদম্য বিলাস।

দু'মেরুতে আজ বৃষ্টি ভেজা
রাত্রি,
পার্থক্য শুধু সময়।
ভাবনার দৃশ্যপটে
বৃষ্টিময়
তোমার আমার কাব্য।
এ বৃষ্টি আমার হৃদয় ছুঁয়েছে
আর ছুঁয়ে যাক
তোমার হৃদয়।

Sunday, May 15, 2011

ভালবাসার জলছাপ

ঝরে গেছে শুকনো পাতা
বসন্তের শেষ দিনে,
আলো আর আধারের সন্ধিক্ষণে
তৈরি হয় হাজারো
ছায়াকাব্য।
বিলীন অন্ধকার ম্লান হয়ে
ফিরে আসে দিনের আলো,
অপেক্ষার শুরু না অবসান
দ্বিধাগ্রস্ত ভালবাসার
মহান পুরুষ।
আঁধারের মাঝে আঁধার
নাকি আলোর মাঝে তুমি?
ভালবাসার জলছাপ
শুধুই কি মরিচীকা নাকি আরো কিছু!
তবু তুমি এসো,
অর্ভ্যথনা জানিয়ে
দিগন্তের শেষ আলো,
আর একমুঠো বেঁচে থাকার আশায়।

Monday, April 25, 2011

অভিমানী খোকা

এইরে খোকা,কি হল তোর,একটু কাছে আসবি না?
চুমু খেয়ে দুষ্টরে তুই একটুখানি হাসবি না?
খোকা বুঝি রাগ করেছে,মুখটা অমন ভার করেছে,
দুষ্টমিতে পাক ধরেছে?
খেলনা নাকি কম পড়েছে,কেউ বুঝি গাল দিয়েছে?
হাতের খাবার কাক নিয়েছে?
আমার খোকার মনটা খারাপ,চাঁদের কাছে নালিশ যাবে।
সূর্য়ি মামা জানবে যখন উচিত রকম শিক্ষা পাবে।

তুমি মা আমায় ছেড়ে থাকো যখন অনেক দূরে
চাঁদের সাথে কথার ছলে,মনটা আমার অনেক পুড়ে।
আমি বুঝি খারাপ ছেলে!কি ক্ষতি আমার সাথে থাকলে পরে
মনটা আমার সদা্ই খারাপ থাকি যখন একলা ঘরে।

আচ্ছা খোকা কান ধরেছি
বাইরে যা্‌ওয়া এই ছেড়েছি,
একলা ঘরে আমার খোকা থাকবে না আর একটি দিন
হাসি খেলায় কেটে যাবে অবুঝ খোকার রাত্রি দিন।

Tuesday, April 5, 2011

বাংলা মাকে

থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে কৃষ্ণচূড়ার ডালে
বাংলার মাটি লাল হয়েছে সেই সে রক্ত লালে।
রাষ্টভাষা বাংলা হবে সেই দাবিতে নামল যারা পথে
বাংলা আমার বাংলা তোমার চলবে না কারো কথাতে।

বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা,পাখির ভাষা,প্রাণের ভাষা
রফিক শফিউর জব্বারের বিলিয়ে দেয়া প্রাণের আশা।
পাখির সুরে নদীর টানে পাই যে খোঁজে বাংলা মাকে
বিশ্ব আজ সালাম জানায় শ্রদ্ধাভরে বাংলা মাকে।

Friday, April 1, 2011

wide your vision

ARAFAT MUNNA is one of the youngest writer of Bengali literature.He believes in his power.He shows his writing skill in poem,short story,drama and novel.He starts writing from his early age.His first poem was published in 'TOITTOMBER' at the age of ten.He was born in shalchar,chandina in the district of comilla in 29 march.He passed his primary level from 'SHALCHAR GOVERNMENT PRIMARY SCHOOL' in his village.Then he came to dhaka with his family and admitted into 'MOTIJHEEL MODEL HIGH SCHOOL'.After getting golden G.P.A-5 in s.s.c. from 'MOTIJHEEL MODEL HIGH SCHOOL',he was admitted in the notre dame college(Number one college of dhaka city).In school life, he stood first in all exam.He is famous for his fluently writing.'Padda andSujan' is the most famous creating character of his.The first story of this series was published in three magazine (The daily azkar kagoz,The daily inkilab and the khabarer antarala)

পহেলা বৈশাখ

রমনার বটমূলে ছেলে-বুড়ো সবে
আনন্দে মেতে উঠে মহা কলরবে।
লোকেদের গায়ে শোভা পায় বাংলার রূপ
বিদেশী সংস্কৃতি তখন থাকে যেন চুপ।
গ্রাম থেকে শহরে বসে বৈশাখী মেলা
ছুটোছুটি লুটোপুটি কত নানা খেলা।
ইলিশ আর পান্তাভাত সবাই যায় খেতে
গরীব-দুখী ভুলে দুখ আনন্দে মেতে।
মেলাগুলো নানা রকম পশরা নিয়ে সাজে
আনন্দ ছাড়া মন বসে না যেন কোন কাজে।
পহেলা বৈশাখ হাসি-খুশিতে থাক ভরে
এ আনন্দ আসুক বাংলার প্রতিটি ঘরে।

Thursday, March 24, 2011

ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন

বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে
বাংলাদেশের দামাল ছেলে,
বুক ভরা সব আশা নিয়ে
বিশ্ব আজ মাতিয়ে খেলে।
বাঙালী সাহসী জাতি
ভয় করে না কিছুতে,
বীরদর্পে এগিয়ে চলে
জানে না সে পিছুতে।
ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন সবার
হয় না যেন বাড়াবাড়ি,
আশাকুকটুকু থাকুক যেন
সামর্থটুকু দেখাতে পারি।

Wednesday, March 23, 2011

সৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ

বিবর্ণ পৃথিবীতে
মাটি চষা চাষাদের অতৃপ্ত তৃষ্ণায়
ঢেলে দিয়ে একমুঠো সুখ
উত্তরী হাওয়ার আহবানে,
জড়া আর মৃত্যুর ক্লান্তি ছুঁয়ে
বেজে উঠে বোশেখী ডাক,
এর-ই মাঝে ফিরে আসে
পহেলা বৈশাখ।
ফাগুনের ভেজা কাঁপন ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসে নিষিদ্ধ রাত
কল্প কথার গল্প শেষে
তবুও তা নতুন প্রভাত।

ফিরে যাক ফিরে আসুক
তবুও নতুন থাক,
সৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ।

ভ্রূ চ্যুতি

বাড়ি থেকে স্কুলটা বেশ দূরে। তাই সুজনকে স্কুলে হোস্টেলে দিয়ে দেওয়া হলো। সুজন চলে গেছে, তাই বলে কি পদ্ম বসে থাকবে! তা তো হতেই পারে না। তাই পদ্মও তার বাবা-মার বাধা সত্ত্বেও ভর্তি হয়ে গেল। বাড়ি থেকে হোস্টেলে বেশ মজাই কাটতে লাগল দু’জনের। তবে যখনই পড়ার ব্যাপারটা আসে তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিতাই স্যারের জ্বালায় পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করাই মুশকিল। রাতের বেলা পড়া শেষ না করে কিছুতেই ঘুমানো যাবে না ,তার ঊপর আবার রাত শেষ না হতেই ঘুম থেকে ডেকে তোলে। এতে ওদের একেবারে অতিষ্ট হওয়ার অবস্থা। এত পড়া ওরা জীবনে আর কখন পড়েছে বলে মনে হয় না। পড়িয়ে ওদের পন্ডিত বানানোর অবস্থা। তাদেরকে হোস্টেলে দিয়ে তাদের বাবা-মা এক রকম শান্তিতেই আছেন বলতে হয়।

স্কুল হোস্টেলে থাকার যে কম মজা তা কিন্তু নয়। হোস্টেলে অবস্থান করা ছেলেদের স্কুলে আলাদা একটা দাপট থাকে। যে কোন ব্যাপারে তাদেরই আগে ডাকা হয়। এ নিয়ে পদ্মের গর্বের শেষ নেই। ‘ফাহিম’ ফাস্ট বয় হলেও স্কুলের কোন ব্যাপারে তার ডাক আসে না। এ নিয়ে তার এক রকম রাগ আছে বলতে হয়। পদ্ম আর সুজন এমন ভাব নিয়ে থাকে যেন পুরো ক্লাসের নেতা তারাই। অবশ্য স্কুলের হোস্টেলে থাকার সুবাদে ক্লাসের ক্যাপ্টিনসিটা তারাই পেয়েছে। সুতরাং ক্লাসের কোন ছেলে ওদের বিরুদ্ধে গেলেই হয়; কত ধানে কত চাল ওরা ভালভাবেই তা বুঝিয়ে দেয়। স্যারের কাছে মিথ্যা বিচার দিয়ে তারপর মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করে একেবারে নাজেহাল অবস্থা করে দেয়। তাই সব ছেলে তাদের অনুগত হয়ে থাকার চেষ্টা করে। ক্লাসের ছেলেদের প্রতি ওদের বেশ মায়াও আছে। ওদের সাথে বেশি বাড়াবাড়ি না করলে ওরা এমনিতেই কাউকে মার খাওয়ায় না। এমনকি হাজারো দস্যিপনা করলেও। তাই তাদের এ ঐক্যের কথা পুরো স্কুলে ছড়িয়ে গেল। তাছাড়া পদ্মর অবাধ্য হয়ে ক্লাসে কেউ কথাও বলত না। ফলে ক্যাপ্টিনসিতে তাদের নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। আর তাদের ক্লাসের সুনাম তো পুরো স্কুলেই আছে। সেরা ক্যাপ্টিন হিসেবে তাদের মনোনীত করা হলো। ফলে স্কুলে তাদের নিয়ে অন্য রকম এক অবস্থা।

পদ্মদের উপরের ক্লাসে পড়ে সিরু ভাই। সারা স্কুলে ওনার দাপট আছে। তার এতদিনে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার কথা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো পড়ছেন ক্লাস এইটে, পদ্মদের দুই ক্লাস উপরে। এই স্কুলে এমনো অনেক টিচার আছে যাদের বয়স কিনা সিরু ভাইয়ের সমান। বিভিন্ন ক্লাসে ফেল করে তার এ অবস্থা। সিরু ভাই স্কুল হোস্টেলে পদ্মদের পাশের রুমে থাকে। ওনার মত এ রকম ম্মার্ট ছেলে এ স্কুলে আর একজনও হয়ত নেই। চেহারা এত শ্রী না হলেও চুলের কাটিং, মুখের হাবভাব দেখে মনে হয় যেন ধনীর দুলাল। আসলে তার বাবা একজন মুছি। তাকে দেখলে কেউ তা জীবনে বিশ্বাসও করবে না। পড়ালেখার ব্যাপারে একেবারে হাবা- গঙ্গারাম। একটা জিনিস একশোবার পড়েও মনে রাখতে পারে না। তবে দুষ্টামির মাধ্যমে যা কিছু শিখে তা মোটামুটি মনে রাখতে পারে। এই যেমন সে পীথাগোরাসের সূত্রটা শিখেছে এভাবে, (স্যারের ছেলে) ২=(স্যার)২+(স্যারের বউ)২।

পদ্মর সাথে অবশ্য সিরু ভাইয়ের সম্পর্ক অত ভাল ছিল না। তার কারণ আছে। স্কুলের ড্রেসের জন্য পদ্মর বাবা একটা নতুন সাদা শার্ট কিনে দিয়েছিল। পদ্ম নিজের রুমে শার্টটা রেখে কি কাজে যেন বাইরে গিয়েছিল। এ সময় সিরু ভাই কবিতা মুখস্ত করার সুযোগ পেয়ে পদ্মের শার্টে নজরুলের অভিযান কবিতাটা লিখে ফেলল। তারপর তো পদ্ম সে শার্ট পরে ঘুরে বেড়াতে লাগল। সেদিন ওকে যেই দেখল সেই এটা পড়তে লাগল। এভাবে সিরু ভাইয়েরও কবিতা মুখস্ত হয়ে গেল। পদ্ম সবার কবিতা পড়ার বাতিক দেখে অবাক হয়ে গেল। সুজন এসে পদ্মর শার্টের পিছনের লেখাটা দেখিয়ে দিল। তারপর তো সে রাগে ফোস ফোস করতে লাগল। সোজা গিয়ে নালিশ দিল নিতাই স্যারের কাছে। কিন্তু ফল হলো শূন্য। স্যার বললেন, ও হাবা- গঙ্গারাম মানুষ তোরা সাহায্য করলেই তো ঐ গবেটটা কিছু শিখতে পারবে। সেদিন থেকে সিরু ভাইয়ের উপর তার রাগ চরমে উঠে।

তাছাড়া উনি এমন ভাব নিয়ে চলেন যেন এই স্কুলের হেড মাষ্টার। কোন কিছুর দরকার হলে পদ্ম কিংবা মানুষকে পাঠিয়ে দেবে দোকানে। কি এমন লাট বাহাদুর যে, সিগেরেটটাও তাদের ধরিয়ে দিতে হয়। নিতাই স্যার বড়দের কথার বড়খেলাপ কিছুতেই পছন্দ করেন না। তাই তাদের কথার বরখেলাপ করা নিষেধ। স্কুলের বিভিন্ন কাজ বড় ক্লাসের ছেলেদের উপর পড়লেও তারা এসব কঠিন কাজে ছোট ক্লাসের ছেলেদের দিয়ে করিয়ে নিত, কিন্তু বাহবা কুড়িয়ে নিত তারা। এ নিয়ে পদ্ম- সুজনের রাগের শেষ নেই। পদ্ম আর সুজন বহুদিন ধরে চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে সিরু ভাইকে একটা উচিত মত শিক্ষা দেওয়া যায়। সুজনের মাথায়ই প্রথমে বুদ্ধিটা এল। পদ্ম শুনে তো খুশিতে আটখানা।

গভীর রাত, সবাই ঘুমে একাকার। পাশের রুমে স্যারের নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ সময় সুজন জেগে উঠল। পদ্মকে ডেকে দিল। জিনিসপত্র যা কিছু দরকার সবকিছু ওরা আগেই জোগাড় করে রেখেছিল। চুপি চুপি নিঃশব্দে ওরা সিরু ভাইয়ের রুমে গিয়ে ঢুকল। তারপর রেজার দিয়ে পদ্ম সিরু ভাইয়ের মাথার চুল গুলো দুই পাশ দিয়ে খালি করে দিল। সিরু ভাই টেরই পেল না। কারণ তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। এই দুঃসাধ্য কাজটা করেছে সে নিজেই। রাতের বেলা সিরু ভাই তাকে পানি আনতে পাঠিয়েছিল। তখনই মিশিয়ে দিয়েছিল ঘুমের ঔষুধ। সিরু ভাইয়ের বর্তমান অবস্থা দেখে পদ্মর নিজেরই হাসি পেল। তারা আর বেশিক্ষণ সেখানে না থেকে সব কাজ সেরে ভাল মানুষের মত ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে হৈ চৈ শুনে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ব্যাপারটা কি তাদের আগেই জানা ছিল। তবে এই দোষ গিয়ে পড়ল সালাম ভাইয়ের উপর। কারণ তার বালিশের নিচে রেজার আর কেচিটা পাওয়া গেছে। তারপর আর কি, বেচারাকে খেতে হয়েছে একচোট্ মার! বর্তমানে সিরু ভাইয়ের যা অবস্থা তা দেখে আমাদের গম্ভীর হেডমাষ্টারও না হেসে পারবেন না। পদ্ম বেশ খুশি তার এ নাকানো অবস্থা করতে পেরে। সিরু ভাইকে এ অবস্থায় যারা দেখেছে তারা সবাই হেসে বলেছে, কিরে চুলের নতুন ডিজাইন করেছিস নাকি। সেদিন তার প্রেস্টিজে টান পড়ে গেল। পরে সেলুনে গিয়ে মাথা পুরো ন্যাড়া করে আসতে হলো।

সিরু ভাইকে ন্যাড়া করার ব্যাপারটা সবাই ভুলে যেতে বসেছিল, এমনকি সিরু ভাইও। কিন্তু হঠাৎ একদিন ফাঁস হয়ে গেল ওদের এ কুকীর্তিটা। ওরা দু’জন এসব নিয়ে হাসাহাসি করার সময় সিরু ভাইয়ের এক টিকটিকি তা শুনতে পায়। ফলে খবরটা রাতারাতি তার কানে পৌঁছে যায়। এ কথা শুনে সিরু ভাইয়ের রাগে একেবারে ফেটে যাওয়ার অবস্থা হল। আজ রাত্রেই তাদের আরো বিদ্ঘুটে অবস্থা করবেন বলে ঠিক করেন।

সুজনদের স্কুলের হেডমাষ্টার পেরেগ স্যার বউয়ের সাথে ঝগড়া করে ঠিক করেছেন আজ তিনি ঘরে থাকবেন না। তাই তিনি রাত যাপনের জন্য হোস্টেলে চলে আসেন। সুজন তথা পদ্মদের মাটিতে বিছনা পেতে শুতে হলো। আর তাদের জায়গায় শুলেন নিতাই স্যার।

রাতের বেলা প্রতিশোধের নেশায়, সিরু ভাই কেচি আর রেজার নিয়ে পদ্মদের খাটটার কাছে চলে আসে। পদ্ম কোন পাশে শোয়, তার তা ভাল করেই জানা আছে। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এমন অবস্থা করবো যাতে কেউ দেখলেও চিনতে না পারে। ওদের সেই বীভৎস্য চেহারাটা ভেবে তার খুব হাসি পেল। কিন্তু তিনি জানতেন না যে এখানে কে শুয়ে আছে! তবে নাক ডাকার শব্দ তার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু সে ভাবল এটা হয়ত পাশের রুম থেকে আসছে। কারণ পাশের রুমে পেরেগ স্যারও সমান তালে ডেকে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত রেজার দিয়ে সিরু ভাই নিতাই স্যারের দুই চোখের ভ্রূ-গুলোকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। কিন্তু মাথার চুল কাটার সময় তার টনক নড়ে গেল। পদ্মর মাথায় এত বড় টাক এল কি করে তার তা বোধগম্য হল না। কিন্তু ততক্ষণে স্যার জেগে গেছেন।

আর সিরু ভাইকেও হাতে-নাতে ধরে ফেললেন। স্যার চেচিয়ে পুরো হোস্টেল সজাগ করে তুললেন। তারপর তো সিরু ভাইয়ের উপর চলল সপ্তকান্ড। ঘুম থেকে উঠে স্যারকে পালকহীন কাকের মত দেখে সবার তো হাসিতে পেট ফাটার অবস্থা। স্যার সেদিন এতই চটলেন যে সাথে সাথে এই রাতেই সিরু ভাইয়ের টি.সি. হয়ে গেল। এ খবরে ছোট ক্লাসের ছেলেরা তো খুশিতে আটখানা। কিন্তু এ ঘটনা সৃষ্টিতে কৃতিত্ব কার তা তো বলাই বাহুল্য। তবে স্যারের জন্য ওদের দুঃখ হয়েছে বেচারার একেবারে নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে। ভ্রূ-চ্যুতি ফলে স্যারের ঘর থেকে বাহির হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত তার ভ্রূ-জন্মায়নি ততদিন তাকে এ অবস্থা পোহাতে হয়েছে।

প্রানের ভাষা

বাংলা ভাষা
প্রানের ভাষা
লক্ষ প্রানের নিত্য আশা
ফুলের মাঝে ছড়িয়ে থাকা
হাজার ভালবাসা ।

বাংলা ভাষা ছেলের প্রতি
মায়ের স্নেহ আশা
বাংলা ভাষা হাজার যুগের
স্বপ্ন রঙ্গে খাসা ।

বায়ান্নেরই ভয়াল দিনে
দিল যারা প্রান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
সে তো
তাদেরই দান ।

প্রানের ভাষা

প্রানের ভাষা
কবি : আরাফাত মুন্না
বাংলা ভাষা
প্রানের ভাষা
লক্ষ প্রানের নিত্য আশা
ফুলের মাঝে ছড়িয়ে থাকা
হাজার ভালবাসা ।

বাংলা ভাষা ছেলের প্রতি
মায়ের স্নেহ আশা
বাংলা ভাষা হাজার যুগের
স্বপ্ন রঙ্গে খাসা ।

বায়ান্নেরই ভয়াল দিনে
দিল যারা প্রান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
সে তো
তাদেরই দান ।

স্বপ্নের হ্রাস

রুপালী জোস্নারা ঝরে পড়ে
দিঘির জলে,
বাধ ভাঙা স্বপ্নেরা ছুটে চলে
কাটা তারের
বেড়া গলে।
নিরুদ্দেশে ছুটে চলা
ক্লান্তি আর অবসাদে থেমে যাওয়া,
তবু আমি শুনতে পাই
`ছুটে চলো' যুগান্তরী হাওয়া।
কে যেন আমায় স্বপ্ন দেখায় !
নিশ্চিত থাকি হবে না পাওয়া।
কিন্তু পাল্টে যায়,পাল্টে যায় ইতিহাস
আমার হাতের ইতিহাস ,
বিজয়ের পর তবু হয়
স্বপ্নের হ্রাস!