Sunday, September 11, 2011

পাজিদের খপ্পরে

চলতে ফিরতে টাকার প্রয়োজন যে কত তা মানুষ মাত্রই বুঝে। টাকা না থাকলে নিজের ভিতর ভিতর এমনিতেই ফকির ফকির একটা ভাব এসে যায়। বয়স তের হয়েছে তো কি হয়েছে, তাই বলে যে টাকার প্রয়োজন হবে না তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া ছোট্ট বাচ্চারা অন্য কিছু না চিনলেও সবার আগে টাকাটা ঠিকই চিনে। সুজনের পকেটটা বর্তমানে ফাঁকা তাই তার মাথায় ভাবনাগুলো খেলতে লাগল। তাছাড়া বাবা-মার পেছনে এক সপ্তাহ ঘুরে যাও দশ-বার টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে কি আর চলে! দোকানে একবার বসলেই তো পকেট গড়ের মাঠ। কিভাবে টাকা আয় করা যায় তাই নিয়ে সুজন বেশ ভাবতে লাগল। না, তার মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না। সে ভাবল, পদ্ম সাথে কথা বলা যাক, সে নিশ্চয়ই একটা আইডিয়া দিতে পারবে।
পদ্মকে বেশি দূর খুঁজতে হলো না, পুকুর ঘাটেই পাওয়া গেল। বরশি দিয়ে মাছ ধরছিল। সুজন নিশব্দে গিয়ে পদ্মের পাশে বসে পড়ল।
পদ্ম ওর দিকে না তাকিয়ে বলল, কিরে কোন সমস্যা মনে হচ্ছে।
সুজন কন্ঠে অভিমান নিয়ে বলল, সমস্যার কি আর শেষ আছেরে, ইদানিং বেশ টাকার সমস্যায় ভুগছিরে। বাবা মার কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে কি আর চলে। তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম যে বেড়েছে তা কি তাদের খেয়ালে আছে।
পদ্ম সুজনের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল, এ আর নতুন সমস্যা কি! এ সমস্যায় আমিও ভুগছি, তুইও ভুগছিস সব ছেলেরাই তো ভোগে।
সুজন এবার চান্স পেয়ে বলল, তাই তো বলছিলাম আমরা টাকা আয়ের নতুন কোন পথ খঁজে বের করি।
-ভিক্ষা ছাড়া কোন পথ নেই, বলেই পদ্ম হাসতে লাগল। রাস্তার মোড়ে থালা হাতে ভিক্ষা করতে পারবি তো।
-ধুৎ এসব যে কি বলিস। না বলছিলাম কি, কোন কিছুর ব্যবসা-ট্যবসা করা যায় না।
-এ বয়সে ব্যবসায়ী (!?) আমাদের প্রেস্টিজ বলে কথা আছে না! তাছাড়া সবার কাছে আমাদের পাত্তা থাকবে বলে মনে করিস? সবাই যখন ‘আম ব্যাপারী’ নয় ‘জাম ব্যাপারী’ কিংবা ‘কচু ব্যাপারী’ বলবে তখন কেমন লাগবে?
সুজন এবার কোন কথা বলল না, চুপ করে ভাবতে লাগল। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল।
-ইউরেকা ! দারুন একটা আইডিয়া পেয়েছিরে পদ্ম। পুঁজি ছাড়া জমজমাট ব্যবসা। কিছু দিনের ভিতর মনে র্ক হাজার পতি।
পদ্ম এবার অবাক না হয়ে পাড়ল না। তবু সে ব্যাপারটাকে একটু তাচ্ছিল্য করে বলল, ওসব চুরির চিন্তা বাদ দে। শেষে চুরিতে ধরা খেলে শরীলের হাড্ডি গুড়ো করে বাচ্চাদের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ গুরুদুধ তৈরি করবে।
-আরে গাঁধা ও সব কিছু না। আমাদের গণক সাজতে হবে। মানুষের হাত দেখে টাকা আয় বুঝলি। জমজমাট ব্যবসা হবে। দিনে একশ হলে ও চলে নাকি!
সুজনের আইডিয়াটা পদ্মের বেশ পছন্দ হল। সে ভাবল, কিছু টাকা যদি আয় করা যায় তাহলে অন্তত কিছুদিন এলাকায় বেশ ভাব দেখিয়ে চলা যাবে। তাছাড়া শান্তাকে একটা উপহারও দেওয়া যাবে। অনেক দিন সে দেবে দেবে ভাবছিল কিন্তু টাকায় আর হয়ে ওঠে না। অথচ তুরাবটা ওকে উপহার দিতে দিতে ওর মন পাওয়ার অবস্থা হয়ে গিয়েছে।
পদ্ম আর সুজন ব্যবসার কাজ পুরোদমে শুরু করে দিল। এ কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের সাগরেদ হিসেবে নেয়া হল কেরামতকে। সেদিন ভূত হিসেবে ধরা খেয়ে দু‘জনের হাতে যা মার খেয়েছে তাতে সে সব শত্রুতামি ভুলে গিয়েছে। শেষে পদ্মদের দলে যোগ দিয়েছে। এজন্য অবশ্য তাকে রক্তকসম কাটতে হয়েছে। আর রক্ত কসম মানে তো বুঝই!
জ্যোতিষী হওয়ার কাজটা ওরা যত সহজ ভেবেছিল আসলে তত সহজ নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের যে কত ফের আছে তা কি ওদের ছোট্ট মাথায় ধরে। হাতের কোন রেখার কি নাম তা মনে রাখা বায়োলজির বৈজ্ঞানিক নাম মনে রাখার ছেয়ে আরো কঠিন। জ্যোতিষী হওয়ার জন্য ওরা এক ঘাট্টা বইও কিনে এনেছিল। এখন এসব পড়ে দু’জনের মাথা হেট হচ্ছে! তাই ওরা ভাবল, কোন গুরুর কাছে গিয়ে শিক্ষা নেবে কিন্তু দেখা গেল সেই বেটা ওদের থেকে আরো ফাঁকিবাজ। ওরা তো বই দেখে কিছু শিখেছে কিন্তু সেই বটোতো তাও জানে না। তবে ঐ লোকের ফাঁকিবাজির টেকনিকগুলো শিখে নিল।
কিছুদিনের ভিতর ওরা ওদের জিনিসপত্র নিয়ে ভাল একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসে পড়ল। দু’জনের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে ফেলল। লম্বা কালো আলখাল্লা, মুখে সাদা দাড়ি, মাথায় বিশাল বড় এক পাগড়ি। সামনে স্বচ্ছ কাছের হাড়ি, ওদের এমন একটা ভাব যেন এই কাচের হাড়িতে ওরা মানুষের ভূত-পূর্ব-ভবিষ্যত সবই দেখতে পায়। কেরামত পাক্কা সাগরেদের মত কাজ চালাতে লাগল। আর একটা ব্যানারের ভিতর “এখানে মানুষের অচিন্তনীয় বিষয় চিন্তা করা হয় এবং ভাগ্য পরিবর্তন করা হয় -অকার্য সাধনে শ্রী গুরুজি হানাফাত আলী সিনা পদন এবং শ্রী গুরুজি মারাকত আলী সুজনপুরী ” লিখে সামনে ঝুলিয়ে দিল। ছদ্ম নামের সাথে ওদের নাম সামান্য পরিবর্তন করে জুড়িয়ে দিল, যাতে কেউ এসে বললে সহজে ধরে ফেলতে পারে।
নতুন ব্যবসায় ওদের সাফল্য বেশ ভাল ভাবেই আসতে লাগল। ভাগ্য পরিবর্তনের নেশায় সবাই হুমরি খেয়ে পড়ল। এলাকার যত ভাবুক ছেলে ছিল সবগুলো অচিন্তনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে এল। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেল বিদেশ থেকে আগত দুই গুরু অকল্পনীয়ভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করিয়ে দিতে পারে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতে লাগল তাদের কাছে। প্রথম দিকে তারা ‘বিজিট ফি’ পাঁচ টাকা নিলেও, পরে এত সাড়া পেয়ে ‘বিজিট ফি’ বাড়িয়ে দিল। তারপর ও লোকের কমতি নেই।
স্কুল টাইমে এরা শুধু বেশ-ভূসা পাল্টে ক্লাস করে আসে। তারপর আবার আগের বেশে কাজে নামে। ক্লাসের ছেলেরা ওদের সামনেই দুই গুরুজির কীর্তন গায়। ওরা শুধু মনে মনে হাসে আর বলে,“তোরা কি আর বুঝবি ঐ গুরুজি কে?”
প্রতিদিন ওদের কাছে মানুষ অদ্ভুত সব সমস্যা নিয়ে আসে। সেদিন এক লোক আসল, তার মোরগের ভবিষ্যৎ বলে দিতে। ওরা কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল, আপনার মোরগ ভবিষ্যতে ডিম দেবে, সকাল বেলা আরো জোরে জোরে ডেকে সবার ঘুম হারাম করবে। এ কথা শুনে লোকটাতো আনন্দে উৎফুল্ল। এমন সময় সুজনের বোধোদয় হল। সে ভাবল, আরে মোরগ আবার ডিম দিতে পারে নাকি!
তাই সে কথা কাটানোর জন্য বলল, আপনার মোরগ আজকে রাতেই শুধু ডিম পাড়বে। এবং আজকেই শেষ।
কথা বললেই তো হবে না, প্রমাণ তো করতে হবে। তাই রাতের বেলা চুপি চুপি গিয়ে ওরা মোরগের নিচে এককুড়ি ডিম দিয়ে আসল। পরদিন সকাল বেলা এ ব্যাপার নিয়ে পুরো গ্রামজুড়ে হইচই পড়ে গেল। গুরুর আশির্বাদে মোরগে ডিম পেড়েছে এই রবে পুরো এলাকা তোলপাড়। এর ফলে ওদের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বেড়ে গেল। আগের থেকে লোকসমাগমও বেড়ে গেল প্রচুর পরিমাণে। গণকের সাথে দরবেশ উপাধিটাও জুড়ে গেল।
ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ওদের কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হতো। ওরা প্রথমে হাত দেখে যে কোন একটা সমস্যার কথা বলত। আর এটা শুনে তো ঐ লোকের যখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, তখন পদ্ম গম্ভীর হয়ে বলত, চিন্তা করে লাভ নেই বৎস, এই সাদা হাড়ির ভিতর মাথা ঢুকিয়ে এক ঘন্টা বসে থাক তাহলে সব সমস্যা কেটে যাবে। পরে যখন দেখত এই হাড়ির ভিতর মাথা ঢুকিয়ে রাখার জন্য সেই সমস্যা আর হতো না তখন তো লোকে ওদের প্রসংশায় আত্মহারা হতো।
এমনিভাবে একদিন এক ডাকাত সর্দার এলো ওদের কাছে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। ডাকাতিতে কিছুতেই সাফল্য পাচ্ছে না বেচারা। পরবর্তী মিশন যাতে আর ব্যর্থ হতে না হয় তাই ওদের কাছে আসা।
সুজনের হাতে দুইটা পাঁচশ টাকার নোট গজিয়ে ডাকাত সর্দার তার পা টিপতে টিপতে বলল, “বাবা মোগো লাই কিছু কর, দুই দুইডা ডাকাতি থাইকা খালি হাতে ফিরা আইছি এইবার কিছু কইরতে না র্পালি ডাকাতির ইজ্জত যাইব।”
এ কথা শুনে সুজনের মুখটা উজ্জ¦ল হয়ে উঠল। অনেক দিন থেকে তারা গোয়েন্দাগিরির পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু কোন কেচ-ই হাতে আসছে না। স্বয়ং ডাকাতকে কাছে পেয়ে ওরা ব্যাপারটা লুফে নিতে চাইল।
তাই পদ্ম জিজ্ঞাসা করল,“পরবর্তী মিশন কোথায় আছে?”
“গোপন ব্যাপারগো বলতি নাই!”
“না বললে তো এবার ও ব্যর্থ।”
“হায় হায় একি কতা কইলে গো বাবা। দয়া করহ্ দয়া করহ্। গোপন
ব্যাপার হলিও তোমাগো তো বলতি মানা নাই। তোমগো তো সর্বোদৃষ্টি।
হাসু মেম্বরের বাইত। আলমারি ভত্তি টাহা আছে,হুনছি।”
“ঠিক আছে ঠিক আছে। সে আমার আগেই জানা আছে। শুক্রবারে শুধু
লাঠি হাতে ডাকাতিতে যাবি তাহলে আর কেউ ঠেকাতে পারব না। মনে
রাখবি লাঠি হাতে শুক্রবার রাতে অন্য কোন দিন না।”
তারপর ডাকাত সর্দার ওদের পা চুম্বন করে খুশি মনে বিদায় নিল।
ডাকাত দলকে কিভাবে ধরলে ওদের ক্রেডিট বাড়বে তাই নিয়ে ভাবতে লাগল ওরা। সুজন মরামর্শ দিল, “আয় পুলিশকে আগে সব জানিয়ে রাখি তাহলে মনে কর দলটাকে ধরা সোজা হবে।”
পদ্ম ওর কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,“তোর মাথায় ব্রেন বলতে কিছু নেই। বোকা কোথাকার, পুলিশই যদি ধরে ফেলল তাহলে তো পুরো ক্রেডিট যাবে পুলিশের হাতে। তাছাড়া আমাদেরও বিপদের সম্ভাবনা আছে।
“আমাদের আর বিপদ কি”?
“আমাদের বিপদ কি মানে! পুলিশ যদি জিজ্ঞাসা করে আমরা কোথা থেকে এ তথ্য পেয়েছি, কি বলবি তখন? শেষে দেখা যাবে ডাকাত হিসেবে আমাদেরই লক-আপে ডুকিয়ে দেবে। সুতরাং আমাদেরকেই মাঠে নামতে হবে। পুরো ডাকাত দলকে পরাস্ত করে তবেই পুলিশ। বুঝলি?”
“ডাকাত দলকে আমরা পরাস্ত করব? ফাজলামো করিস না। যা কিছু করার চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে।”
“চিন্তা ভাবনা করেই বলছি।”
“নাউযুবিল্লাহ, আমরা দু‘জন ডাকাত দলের সাথে পারব কি করে।”
“সেটাই তো গোয়েন্দাদের ক্রেডিট। আমরা দু‘জন কে বলল কেরামত আছে না। তাছাড়া মেম্বার সাহেবের ¯েœহধন্য হওয়ার এটা একটা বড় সুুযোগ।”
“পদ্ম আমি তো চোখে কোন পথই দেখছি না। শেষে না ডাকাতের হাতে প্রাণটা যায়।”
পদ্ম মৃদু হেসে বলল,আগে শুক্রবার আসুক তারপর দেখবি। শুক্রবার দিন সকাল বেলা কেরামত এসে খবর দিল, সে দু‘জন লোককে দেখেছে হাশু মেম্বারের বাড়িতে নজর রাখতে। পদ্ম শুনে বলল, “এ আর নতুন কী, ডাকাতদের সিস্টেমই এটা। ডাকাতি করার আগে বাড়ির হাল অবস্থা জেনে যায়। তবে ডাকাতিতে কয় জন আসবে তা জানতে পারলে ভাল হত?”
কেরামত মাথা চুলকে বলল, “কয়জন আর হবে? সত্তর কি আশি।”
পদ্ম ঠাট্টা করে বলল, “তোর বিয়ের দাওয়াত খেতে আসবে তো,তাই পুরো এলাকাবাসী নিয়ে আসবে। গাধা এই কমন সেন্সটাও নেই। দশজনের বেশি তো আসবেই না।”
এবার সুজন কিছুটা অভিমান দেখিয়ে বলল, “ঐ দশজনকে পরাস্ত করবি কিভাবে সেটাই আগে ভাব।”
“সেটা আমার ভাবা হয়ে গেছে। তুই শুধু তোর ছোট ভাইয়ের খেলনার পিস্তলটা নিয়ে আসবি। আর আমাদেও টিমে আর একজন লাগবে।”
“তুই কি পাগল হয়েছিস্ খেলনার পিস্তল দিয়ে ডাকাত দলের মোকাবেলা! তোর আসলে প্রাণের মায়া নেই। আরেক জন না লাগবে বললি, ইচ্ছে করলে কেরামতের দুধ খাওয়া ভাইটাকে নিতে পারিস।
পদ্ম ভাবল, এই দু‘জনকে পুরো পরিকল্পনা বুঝিয়ে না বললে কোন কাজই হবে না। তাই সে পুরো পরিকল্পনাটা বিস্তারিতভাবে ওদেও শুনিয়ে দিল। সব শুনে ওদের কাছে পুরো ব্যাপারটা পানির মত সোজা মনে হলো। সুজন পদ্মের বুদ্ধির প্রসংশা না করে পারল না।ওদের সঙ্গী হিসেবে আরেক জনকে খুব সহজে পাওয়া গেল, ওদের ক্লাসেরই শমসের। সব কাজে ওদের খুব সহযোগিতা করে।
শুক্রবার রাতে ওরা উপস্থিত হয়ে গেল হাসু মেম্বারের বাড়িতে। কি করতে হবে পদ্মদের খুব ভাল করেই জানা আছে, তারা শুধু ডাকাত দলের অপেক্ষা আছে। রাত বারটা পঁচিশে ডাকাত দল এসে হাজির হল হাশু মেম্বারের বাড়িতে। ওরা মোট পাঁচজন।দু‘জন বাইরে পাহারায় আর তিন জন বাড়ির ভেতরে গেছে ডাকাতি করতে।
পদ্মদের পুরো টিমটাও রেডি। ডাকাতদের সব কর্মকান্ড ওরা আম গাছের ডগায় বসেদেখছে। মূল মিশনে যাবে পদ্ম, সুজন আর কেরামত। সমশেরের কাজ হলো ওদের কিছু হলে পুরো গ্রাম ডেকে জাগিয়ে তোলা। সুজন বলল,আয় আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দ্্িই।পদ্ম ওকে থামিয়ে বলল, ‘উহ হো’ এখন কিছুই করা যাবে না, ডাকাতরা মূল মিশনে যাবে আর আমরা শুরু করব। তবে এতক্ষণে মনে হল ডাকাতরা বাড়িতে আক্রমন করে লুটপাট শুরু করেছে কারণ বাড়ির ভেতর থেকে হই চই শোনা যাচ্ছে।
ওরা এবার কাজে নেমে পড়ল । প্রথমেই দুই পাহারাদারকে শায়েস্তা করতে হবে। পদ্ম আর কেরামত দুই দিক থেকে এগিয়ে গেল দুটো বরাগ বাঁশের লাঠি নিয়ে। গাব গাছের পিছনে লুকিয়ে ওরা সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল। কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই দেখে ডাকাত দুটো আলাপচারিতায় মগ্ন হলো। পদ্ম কেরামতকে ইশারা দিল এটাই সবচে ভাল সুযোগ। দু‘জন একসাথে দুই ডাকাতের মাথার পিছনে মড়াৎ করে দিল বাড়ি। ‘কোৎ’ করে দুই ডাকাত এক সাথে অজ্ঞান। সুজন দেরি না করে দুটো ডাকাতকে শক্ত করে বেঁধে ফেলল।
বাড়ির ভেতর সবার মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও,ডাকাত সর্দারের লাঠির সামনে দাঁড়ানোর সাহস কারও নেই। পদ্ম,সুজন আর কেরামত চুপি চুপি এগিয়ে গেল। পদ্ম বলল, সবার পিস্তলগুলো হাতে বের করে রাখ। ভুলে ও ভাববি না এগুলো খেলনার পিস্তল।
ডাকাতরা খুব চালাক, বিদ্যুৎ সংযোগ আগেই নষ্ট করেছে। ওদের হাতে টর্চ আছে। অন্ধকার হওয়ার পদ্মদের জন্যও সুবিধা হলো।
তিনজনেই খুব সাবধানে কাজ করছে। ডাকাতদের মুখোমুখি হলেই ঝামেলা। ওরা ঘরের ভিতর উকি দিল। সবাইকে বেধে রেখেছে মনে হলো। ডাকাতগুলো জিনিসপত্র লুট করে বস্তার ভিতর ডুকাচ্ছে। ওরা তিনজন দেয়াল ঘেঁষে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে লাগল। সুজনটা শেষ পর্যন্ত বিপত্তি লাগাল। হাঁসের খোঁয়াড়ের খুটিতে ধাক্কা খেয়ে দরাম করে পড়ল মাটিতে। ডাকাত দল সাবধান হয়ে গেল। টর্চ টিপে ধরে রাখল তার দিকে। দু‘জন লাঠি তোলে এগিয়ে আসল ওকে মারার জন্য। ডাকাত দুটোর হিং¯্র চেহারা দেখে সুজনের আত্মরাম খাচাছাড়া।
এ অবস্থায় পদ্ম আর কেরামত করল আসল কাজ। দু‘জন দুই ডাকাতের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গলা একটু মোটা করে বলল, একটু নড়বি তো শালা মাথার খুলি উড়িয়ে দেব। আমরা পুলিশের লোক। তোদের ডাকাতির খবর আগেই পেয়েছি। ওর কথায় মনে হয় কাজ হল। কারন দুই ডাকাত একদম স্থির হয়ে গেছে। কিন্তু আরেকটা কই? ঐ ডাকাতের আসলে আজ অভিষেক ছিল। দুই ডাকাত ধরা পড়ায় বেচারা এত পরিমানে ভয় পেয়েছে যে ভো দৌড় দিয়েছে, যাওয়ার সময় লুঙ্গিটাও ফেলে গেছে।
সুজন বাড়ির সবার বাধন খুলে দিল। সাথে সাথে দুই ডাকাতকেও বেধে ফেলা হলো। হাশু মেম্বারের কাজের ছেলে ছাত্তার গিয়ে পুলিশেকে খবর দিল। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেল ডাকাত দলকে। থানার ওসি সাহেব ওদের সাহসিকতার খুব প্রসংশা করল। আর হাশু মেম্বারের তো কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। পারলে ওদের নিজের ছেলে করে রেখে দেয়।
ওদের এ সাহসিকতার সুনাম পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল। স্কুল থেকেও ওদের সাহসী ছেলে বলে সংবর্ধনা দেয়া হলো। পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হলো ওদের কৃতিত্ব।
পদ্ম আর সুজন ভাবল এত সুনাম থাকতে আর ঐ গণকবাজি করে কাজ কি ! তাই তারা ঐ ফাঁকিবাজি কাজটা ছেড়ে দিল। কিন্তু মানুষ কি আর মানে, দুই বাবার শোকে সবাই একেবারে শোকাহত হয়ে গেল। বাবা গো কোথায় গেলে,বলে এ বাড়ি ও বাড়িতে শোকের আওয়াজ শোনা যায়। পদ্ম, সুজন কি করবে তাই ভাবছে!আমার লেখা পড়ুন।

No comments:

Post a Comment